ভিডিও বুধবার, ২১ মে ২০২৫

মায়ের উদ্বেগ কি গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে

মায়ের উদ্বেগ কি গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। প্রতীকী ছবি

একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর মনে বিভিন্ন সময় নানান রকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করে। নিজের জীবন নিয়ে, পাল্টে যেতে থাকা শরীর নিয়ে, অনগিত শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। অনেকে দুঃস্বপ্নও দেখেন। এ সবই স্বাভাবিক।

কিন্তু কোনো নারী যদি এমন পরিবেশে বা মানসিক পরিস্থিতিতে থাকেন, যেখানে তিনি টানা অনেকটা সময় উদ্বিগ্ন থাকেন ও দীর্ঘসময় ধরে উৎকণ্ঠা বোধ করেন, তাহলে শিশুর উপর কেমন প্রভাব পড়বে? মায়ের সুস্থতা শিশুর জন্য জরুরি, এ কথা সবাই জানে। তাই গর্ভবতী মা-কে ভালো ভালো খাবার, আরামে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে চেষ্টা করেন অনেকেই। কিন্তু তার মনের খবরকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তো?

কেননা গর্ভাবস্থায় মায়ের উচ্চ মাত্রার মানসিক চাপ শিশুর প্রথম বছরে অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এমনকি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ অকাল প্রসব, কম ওজনের শিশু জন্ম এবং ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মায়ের মানসিক চাপের দিকে খেয়াল রাখা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাঙ্গালুরুর মিলান ফার্টিলিটি হসপিটালের চিকিৎসক ডা. টি শিল্পা রেড্ডি এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন-

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় মায়ের অতিরিক্ত চাপ নবজাতকের প্রথম বছরে অসুস্থতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। কিছু চাপ স্বাভাবিক, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী চাপ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যেমন-

১. অকাল প্রসব: মা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপে থাকলে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রসবের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে গর্ভধারণের ২৭-৩৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রসবের ঝুঁকি বাড়ে।

২. কম ওজন নিয়ে জন্ম: চাপগ্রস্ত মায়ের শিশুরা সাধারণত ওজন কম নিয়ে জন্মায়। জন্মের নিরাপদ ওজন ২ দশমিক ৮ কেজি। এর থেকে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা জন্মের পরও অনেক ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকতে পারে।

৩. ভ্রূণের বিকাশে বাধা: মায়ের মানসিক চাপ গর্ভের ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দিতে পারে। এটি পরবর্তীতে শিশুর শিক্ষণগত ও আচরণগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

৪. কর্টিসল বৃদ্ধি: চাপের কারণে মায়ের স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বেড়ে থাকে। এতে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ভ্রূণের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।

৫. প্রদাহ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ দেহে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা মা ও ভ্রূণের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

আরও পড়ুন

৬. অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস: চাপের কারণে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বাড়তে পারে, এটি গর্ভাবস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলে।

চাপ মোকাবিলার উপায়
১. নিয়মিত জীবনযাপন: গর্ভবতী নারীর সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

২. প্রসবপূর্ব যত্ন: ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে মায়ের বমি বমি ভাব, পিঠে ব্যথা বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা কমানোর উপায় জেনে নিন ও শারীরিক খারাপ লাগা কমানোর চেষ্টা করুন।


৩. পরিবারের সহায়তা: ঘরের কাজ ও অফিসের দায়িত্বের চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে কাজ ভাগাভাগি করে নিন বা বাড়ির কাজে সাহায্য করার জন্য কারও সহায়তা নিন।

৪. মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তুতি: কর্মজীবী নারীদের জন্য অগ্রিম পরিকল্পনা করা জরুরি।

৫. যোগব্যায়াম ও ধ্যান: প্রিন্যাটাল ইয়োগা বা মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৬. শিক্ষা ও প্রস্তুতি: গর্ভাবস্থা, প্রসব ও নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে জানুন। শিশুর বাবাকেও এগুলো জানতে হবে, এতে গর্ভবতী নারীর উদ্বেগ কমবে।

৭. পেশাদার সাহায্য: অতিরিক্ত চাপ বা অবসাদে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, প্রয়োজন হলে ওষুধ বা কাউন্সেলিং থেরাপি নেওয়া যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। তাই চাপ নিয়ন্ত্রণ করে একটি সুস্থ গর্ভধারণ নিশ্চিত করুন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জে র‌্যাবের হাতে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

পাবনার আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুই মামলা, গ্রেফতার নেই

ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা

 আম পাড়তে গিয়ে ডাল ভেঙে পড়ে গৃহবধূর মৃত্যু

বগুড়ার ধুনটে বিএনপির কার্যালয়ে হামলার মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আম ব্যবসায়ী নিহত