উত্তেজনার মাঝেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পাকিস্তানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলা ঘিরে ভারতের সঙ্গে চলমান তীব্র উত্তেজনার মাঝে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান। শনিবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৪৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আবদালি অস্ত্র ব্যবস্থা (এডব্লিউএস) নামের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘ইন্দুস’ সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তান এমন এক সময়ে আবদালি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, যখন জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশের এমন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘গুরুতর উসকানি’ হিসেবে বিবেচনা করতে পারে ভারত।
ইসলামাবাদ বলেছে, ‘‘সামরিক বাহিনীর অপারেশনাল প্রস্তুতি যাচাই এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম ও অন্যান্য কারিগরি সক্ষমতা প্রমাণ করাই ছিল এডব্লিউএস ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের উদ্দেশ্য।’’
পাকিস্তানের সরকারের এক বিবৃতিতে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘটনায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সামরিক বাহিনীর প্রধানরা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সব বাহিনীর অপারেশনাল প্রস্তুতি এবং কৌশলগত দক্ষতার বিষয়ে ‘‘পূর্ণ আস্থা’’ প্রকাশ করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
পেহেলগামে ভয়াবহ হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত রেখা লাগোয়া এলাকায় দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মাঝে গোলাগুলি চলছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করছে উভয় দেশের নিরাপত্তা বাহিনী।
কাশ্মিরে হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারা ভারত আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু তার দাবির পর ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে ভারতের হামলার ঘটনা দেখা যায়নি। এর আগে, গত ২৯ এপ্রিল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেছিলেন, আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে পাকিস্তানে হামলা করতে পারে ভারত।
আরও পড়ুনগত ২২ এপ্রিল কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৫ ভারতীয় ও এক নেপালি নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে। এই হামলার ঘটনার পর হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে। পাশাপাশি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জোরাল হয়েছে ভারতে।
কাশ্মিরে দশকের পর দশক ধরে স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাকিস্তান সমর্থন দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। হিমালয় অঞ্চল লাগোয়া ব্যাপক বিতর্কিত এই ভূখণ্ড নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দু’টি অতীতে দুবার যুদ্ধ করেছে।
পেহেলগামে হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ‘সিন্ধু নদ পানিবণ্টন চুক্তি’ বাতিল ও পাকিস্তানি নাগরিকদের সব ধরনের ভিসা বাতিল করে ভারত। একই সঙ্গে দেশটিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারতের এসব পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও ভারত সঙ্গে স্বাক্ষরিত ‘সিমলা চুক্তি’ বাতিল করে। এই হামলার পর দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে। ভারত ইতোমধ্যে পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ এবং পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজ ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
সূত্র: জিও নিউজ, এনডিটিভি।
মন্তব্য করুন