ভিডিও বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

বগুড়ার শেরপুরে স্থায়ীভাবে বন্ধের পথে বেনারসি পল্লীর তাঁতশিল্প

বগুড়ার শেরপুরে স্থায়ীভাবে বন্ধের পথে বেনারসি পল্লীর তাঁতশিল্প। ছবি : দৈনিক করতোয়া

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরের বেনারসি পল্লীর তাঁতগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের উপক্রম হয়েছে। দীর্ঘ দিন হলো কাজের অভাবে তাঁতগুলো বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময়ও চালু হয়নি বেনারসি শিল্পের কারখানা, এখন সামনে ঈদুল আযহাতেও চালুর কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

অথচ একটা সময় বেনারসি পল্লীর তাঁতযন্ত্রের খটখট শব্দে মুখর থাকত পুরো এলাকা। কিন্তু আর আগের সেই চিত্র নেই। ভারতীয় শাড়ির আধিপত্য, পুঁজির সংকট এবং মহাজনদের কাছে জিম্মি দশার কারণে শেরপুরের বেনারসি শিল্পের তাঁতগুলো বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ। একটা সময় ছিল যখন অভাবপীড়িত ও পিছিয়ে পড়া একটি গ্রামে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে শতাধিক বেনারসি শাড়ি তৈরির তাঁত গড়ে ওঠায় নারী-পুরুষ সবাই মিলে কর্মমুখী হয়ে ওঠেন।

মানুষের মুখে মুখে ঘোলাগাড়ী কলোনি হয়ে যায় ‘বেনারসি পল্লী’। সেই ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে বগুড়ার শেরপুরের ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামের বেনারসি পল্লী। তাই বাধ্য হয়ে কারিগররা সেই হাতে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমানে যারা এ পেশা টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা করছেন, তাদেরও দিন চলছে অতিকষ্টে।

দক্ষ কারিগরের নিখুঁত বুননের জন্য এখানকার তাঁতের তৈরি বেনারসী শাড়ির ব্যাপক কদর ছিল ঢাকা সহ সারাদেশে। করোনা মহামারীর পর দফায় দফায় সুতার দাম বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট ও দেশীয় বাজারে ভারতীয় শাড়ির প্রভাবে বেনারসী পল্লীর তাঁত কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঢাকার মিরপুরে বেনারসি পল্লীতে ১৫ বছর কাজ শিখেন উপজেলার শাহ-বন্দেগী ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ। এরপর তিনি ১৯৯৫ সালে ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামে তার নিজের বাড়িতে প্রথম বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। দিন দিন শাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকলে ঘোলাগাড়ি কলোনি ও নদীয়াপাড়া গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই তাঁতের কাজ শুরু করেন।

কয়েক বছরের ব্যবধানে দুই গ্রামের শতাধিক তাঁত কারখানা বসানো হয়। শুরু হয় বেনারসি, পিওর জাংলা সাটিন, ছাড়াও জামদানি, কাতান, ধুপিয়ানসহ বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি তৈরির কাজ। আর তখন থেকেই ঘোলাগাড়ি কলোনি ও নদীয়াপাড়া ‘বেনারসি পল্লী’ হিসেবে এলাকাবাসীর মুখে মুখে পরিচিত হয়ে ওঠে। এরপর ধীরে ধীরে দেশে ভারতীয় শাড়ি আসতে শুরু করে। ভারতীয় শাড়ির দাম কম হওয়ায় দেশি বাজার দখল করে নেয়। যার ফলে বেনারসি শাড়ি তৈরির তাঁতিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে তাঁতিদের অর্থের যোগান দিতে সরকারিভাবে ঋণ প্রদান করলেও সুতোর দাম বৃদ্ধি ও ভারতীয় শাড়ির আধিপত্যে শাড়ি তৈরি বন্ধ করে দেন তাঁত মালিকরা। ফলে কারিগররা পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশায় রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বেনারসি শাড়ি তৈরির কারিগর খোরশেদ আলম বলেন, ২০ বছর ধরে বেনারসি পল্লীতে তাঁতের কারিগর হিসেবে কাজ করছি। একট সময় শাড়ির এতোটাই ছিল যে, ঢাকার বিভিন্ন শাড়ির শো-রুম থেকে আগ্রীম টাকা দিয়ে অর্ডার দিতো। সারা বছরের পাশাপাশি দুই ঈদ ও পূজোয় চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে শাড়ি আসায় তাদের কদর কমে যাওয়ায় একের পর এক তাঁত বন্ধ হয়ে যায়।

এবারের গত ঈদের মতো খারাপ সময় আগে কখনো দেখিনি। তাঁতী নয়মুদ্দিন ভোলা জানান, জন্ম থেকেই তাঁতের কাজ করছি। এখন আর কাজ নেই তাদের পল্লীতে। বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ করে মুদি দোকান দিয়ে কোনোমতে চলছে জীবন-জীবিকা।

শাহ-বন্দেগী ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা কাজী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারের উচিত এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার সকল ব্যবস্থা নেয়া। তাহলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুদক’র অভিযান

পাবনার বেড়ায় পেঁয়াজ সংরক্ষণে উন্নত পদ্ধতির ঘর

সিরাজগঞ্জে র‌্যাব-১২ এর অভিযানে ৫৮৭ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার ১

দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডর এসএসসি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৫ জনকে বহিষ্কার

রংপুরের মিঠাপুকুরে ক্ষতিকর রঙ মেশানো শিশুখাদ্যে বাজার সয়লাব

মামলা থেকে বাঁচতে মিথ্যা তথ্য প্রচারের অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলন