মধু আহরণ করতে এসে নিঃস্ব অনেক মৌচাষী
লিচুর মুকুলে কীটনাশক প্রয়োগ মারা গেছে অসংখ্য মৌমাছি

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি : লিচুর বাগানে মধু আহরণ করতে এসে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন বেশ কিছু মৌচাষী। অসময়ে লিচুর মুকুলে কীটনাশক স্প্রে করায় মৌমাছি মরে সাবাড় হয়েছে এসব মৌচাষীদের। বেশ কয়েকটি লিচু বাগানে স্থাপিত মৌখামারে গিয়ে দেখা গেছে মাটিতে পড়ে আছে লাখ লাখ মৌমাছির নিথর দেহ। লিচুখ্যাত এলাকা দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মৌখামারে ঘটেছে এমন ঘটনা।
বিরল উপজেলার চকভবানী গ্রামে বেশ কয়েকটি লিচুর বাগানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি লিচুর বাগানে লিচুর ফুল থেকে মধু আহরণের জন্য মৌচাষীরা স্থাপন করেছে শত শত মৌমাছির বক্স। এসব বক্সে নেই মৌমাছির আনাগোনা। বক্সের আশেপাশে এমনকি গোটা লিচুর বাগানজুড়ে মরে পড়ে আছে লাখ লাখ মৌমাছি। ঈদের দিন থেকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ওই এলাকার লিচু বাগানের মৌখামারগুলোতে।
পাবনার ভাঙ্গুরা থেকে আগত আরজু আলম নামে আরেক মৌচাষীর সাথে কথা বলতেই ক্রন্দনরত সুরে তিনি বলেন, ২০০৭ সাল থেকে তিলে তিলে এই মৌখামারটি গড়ে তুলেছি। আমার কষ্টে গড়া মৌখামারটি এবার ধ্বংস হয়ে গেলো। মুকুলে বিষ প্রয়োগের ফলে আমার ১৫০টি মৌ বক্সের সব মৌমাছি মরে শেষ। প্রতিটি বক্সে একটি করে রাণী মৌমাছি থাকে। এই রাণী মৌমাছিগুলো ডিম দিয়ে বংশ বৃদ্ধি করে। সেই রাণী মৌমাছিগুলোও মরে গেছে। প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন খালি মৌবক্স নিয়েই বাড়ি ফিরতে হবে। তিনি বলেন, বাগান মালিক লিচুর মুকুলে কীটনাশক প্রয়োগ করায় এই অবস্থা।
শুধু চকভবানী গ্রামে স্থাপিত লিচু বাগানের মৌখামারগুলোতে এমন অবস্থা নয়। একই অবস্থা বিরাজ করছে আশেপাশের লক্ষীপুর, পাইকপাড়া, শিবপুর, বিষ্ণুপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে স্থাপিত মৌখামারগুলোতে। মৌচাষীরা জানান, একটি মৌমাছি ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিচরণ করে মধু সংগ্রহ করে। তাই চকভবানী গ্রামের একটি লিচুর বাগানে কীটনাশক প্রয়োগ করায় এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের গ্রামগুলোর চার কিলোমিটার এলাকার মৌখামারগুলোতে।
আরও পড়ুনচকভবানী গ্রামের লিচুর বাগান মালিক আজিজুর রহমান বলেন, লিচুর গুটি (ফল) আসার পর পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে ৮ থেকে ১০ বার কীটনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু মুকুলের সময় কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। এরপরও যারা মুকুলের এই সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করেছে, তারা ঠিক করেনি।
একই গ্রামের লিচুচাষী আফজাল হোসেন বলেন, মুকুল থেকে গুটি আসতে শুরু করায় গুটি রক্ষায় আমি রিপকড নামে একটি কীটনাশক প্রয়োগ করেছি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে। বাগানে মৌখামার থাকার পরও কেন কীটনাশক প্রয়োগ করা হলো-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার বাগানের মৌচাষী মিজানুর রহমানের সাথে আলাপ করেই এই কীটনাশক দেয়া হয়েছে। তবে এর আগেও অনেক বাগান মালিকই লিচুগাছে কীটনাশক প্রয়োগ করেছে বলে জানান তিনি।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, লিচুর ফলন বৃদ্ধিতে পরাগয়ানের জন্য যেমন মৌমাছি উপকারী, তেমনি লিচুর ফলন রক্ষায় কীটনাশক প্রয়োগ করাও প্রয়োজন। কিন্তু মৌমাছির ক্ষতি করে কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না। তিনি বলেন, বাগানে মৌখামার থাকার পরও কীটনাশক প্রয়োগ করে মৌমাছি ধ্বংস করা ঠিক হয়নি।
মন্তব্য করুন