গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের প্রতি বছর বাড়ছে ক্ষতিকারক তামাক চাষ

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : সুযোগ সুবিধা ও নিশ্চিত আর্থিক লাভের আশায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর বাড়ছে তামাক চাষ। তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণে নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও শুধু লাভের আশায় এই ক্ষতিকারক ফসল চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। কোন ভাবেই তামাক চাষ বন্ধ না হওয়ায় এবং বাতাসে তামাকের নিকোটিন মিশে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছে চাষিসহ সাধারণ মানুষ।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সালমারা, মহিমাগঞ্জ, হরিরামপুর, নাকাই, রাখালবুরুজ, তালুক কানুপর, শিবপুর, কোচাশহর, কামাদহ, গুমানীগঞ্জ, সাপমারা, দরবস্ত, কাটাবাড়ী ইউনিয়নের করতোয়া নদীর চর এলাকায় প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাক চাষ। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় প্রচলিত বিভিন্ন ফসলের তুলনায় কৃষক পর্যায়ে তামাকের আবাদ সম্প্রসারণ ঘটছে।
এক সময় নদী তীরবর্তী চরগুলোতে তামাক চাষ বেশি হলেও এখন তা সমতলের তিন থেকে চার ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং পরিবেশ জন্য ক্ষতিকর হলেও এ চাষ আবাদে নিরাপদ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে সচেতন নন চাষিরা।
তামাক রোপণ ও পরিচর্যায় চাষিরা কোন ধরণের সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে না। এছাড়াও ক্ষেত থেকে তামাক পাতা উত্তোলনের সময় হাতে গ্লোবস, মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন না তারা। জমি থেকে তামাক পাতা তুলে খোলা উম্মুক্ত স্থানে শুকানোর ফলে বাতাসে মিশছে তামাকের পাতায় থাকা ক্ষতিকর নিকোটিন।
সাপামারা ইউনিয়নের মেরী গ্রামের রুবেল মিয়া জানান, তামাক আবাদ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় চাষিরা শারীরিক নানা সমস্যার শিকার হয়। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট, হাত পায়ে ঘা, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া অন্যতম। অনেক সময় ভাত খেতে তিতা লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ নির্ধারিত মূল্যে তামাক বিক্রির নিশ্চয়তা রয়েছে। যা অন্য ফসলে নেই। এজন্য তামাক আবাদ ছাড়তে পারছি না।
আরও পড়ুনগোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদার রহমান আকন্দ তামাক চাষের ফলে ফসলি জমির মাটি, পরিবেশ ও মানবদেহের নানা ধরণের ক্ষতির পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, তামাক চাষে ক্ষতিকর ও কুফল দিক তুলে ধরে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে প্রচারণা চালানোসহ নানা ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামীতে তামাক আবাদ শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় প্রায় ২৬ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের সচেতন করার মাধ্যমে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে পারলে অধিক খাদ্য উৎপাদনের পাশপাশি কমবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
মন্তব্য করুন