ভিডিও সোমবার, ১২ মে ২০২৫

শব্দ দূষণ

শব্দ দূষণ। প্রতীকী ছবি

ইটের ভাটা, রাসায়নিক প্ল্যান্ট, হাইড্রোলিক হর্ন, গাড়ি চলাচল, মাইকের উচ্চ শব্দসহ নানা কারণে ঢাকাবাসী শ্বাসরোধ অবস্থায় পড়ে গেছে। অর্থাৎ শব্দ দূষণ কতটা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে নগরবাসীকে তা বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে। নির্গত অসহনীয় শব্দ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিশ্বের ৬১টি শহরের মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শব্দের তীব্রতা অনেক বেশি। আর এটি উল্লেখ করে এক অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, শব্দ দূষণে ঢাকায় মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে ৭ বছর। এ দূষণ রোধে ১৪টি সুপারিশ করেছে স্পিড অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় নিরাপদ শব্দ সীমা ৫৫ ডেসিবেল। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল সিটিস ইনস্টিটিউশনের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ও যানজট প্রবণ এলাকায় দূষণের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেলের বেশি। হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো এলাকায়ও শব্দ দূষণে টিকে থাকা দায়। যানবাহনের হর্নের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত উচ্চ শব্দে মাইক এবং সাউন্ড সিস্টেমের শব্দ চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

মূলত বিশ্বের বিভিন্ন শহরগুলোতে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে যানবাহনগুলোর শব্দের মাত্রা যাচাই করে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, শব্দ দূষণের ঝুঁকি বিবেচনা করার বিকল্প নেই। এর আগে এমন বিষয়ও উঠে এসেছে যে, ঢাকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ শব্দ দূষণে আক্রান্ত। অথচ শব্দ দূষণ অব্যাহত থাকলে কানে কম শুনবে। এদের একটি অংশ পুরোপুরি বধির হয়ে যাবে এমনটিও আলোচনায় এসেছিল।

এটা ঠিক যে, বায়ু দূষণ হঠাৎ করে ব্যাপক মাত্রায় কমিয়ে আনা কঠিন। তদুপরি শব্দ দূষণ তাৎপর্য পূর্ণ মাত্রায় কমিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা ও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বিশেষ করে গাড়ির হর্ন এবং মাইকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সার্বিকভাবে ঢাকা শহর, রাজশাহী, টাঙ্গাইল সহ দেশের বিভিন্ন শহরকে বায়ু ও শব্দ দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে প্রথমত দরকার নীতি- নির্ধারকদের মানসিকতার পরিবর্তন। দূষণ রোধ করতেই হবে, এই লক্ষ্যে অটল থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুন

আমরা বলতে চাই, এর আগে বিভিন্ন সময়েই রাজধানীর বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে-যা উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্টদের এটা লক্ষ্য করা জরুরি। এর আগে এমন খবরও প্রকাশ পেয়েছে যে, ঢাকার বায়ু দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী আশপাশের ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের গবেষণায় উঠে এসেছিল, সারা দেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশে পাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টির বেশি। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়।

ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। নাসার তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে ৮৬ শতাংশ। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দূষণ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয় আমলে নিতে। মনে রাখতে হবে দূষণের কারণে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও তৈরি হয়। ফলে বায়ুদূষণ এবং শব্দ দূষণ রোধে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। এসব কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যাধি হয়।

ফুসফুসে ক্যান্সার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও এর আগে খবরে উঠে এসেছে। আর ঢাকায় সৃষ্ট শব্দ দূষণে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা ধ্বংস হচ্ছে বা কমছে। রোগী, গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য শব্দ দূষণ মারাত্মক ক্ষতির কারণ এটাও এড়ানো যাবে না। ফলে সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে ভাবতে হবে। আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। উচ্চ মাত্রার হর্ন ও শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সব ধরনের প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ায় ‘চাকবুম চাকবুম চাঁদনী রাতে’ গানের সাথে চলছে এনসিপির মিষ্টি বিতরণ | Awami League Ban

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নি ষি দ্ধ: শাহবাগে ভূড়িভোজের আয়োজন | Awami League | Daily Karatoa

হবিগঞ্জে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে নিষিদ্ধ ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন মোদি 

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বিষপানে যুবকের আত্মহত্যা