ভিডিও বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ব্যবসায়ীদের দাবি বিসিক শিল্প নগরী ঘোষণার

দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে কাজিপুরের তৈরি কম্বল

দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে কাজিপুরের তৈরি কম্বল

আব্দুল জলিল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) : তিন যুগ আগের কথা। বিকল্প উপার্জনের পথ বাছতেই একদিন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বড়শীভাঙ্গার ছাইদুল হক চলে যান ঢাকার মিরপুরে। তার পছন্দের তালিকায় চলে আসে ঝুটকাপড় কিনে এনে তা সেলাই করে তৈরি করেন কম্বল। সাইকেলের পেছনে তুলে বিক্রি শুরু হয় গ্রামে গ্রামে। হাতে আসে অনেক টাকা। বদলাতে থাকে ছাইদুলের জীবন।

এমনি করে হাজী জিয়া, চান মিয়া, মনির হোসেনরা শুরু করেন এই ব্যবসা। এরপর ২০১৪ সালে শরিফ সোহেল এই ব্যবসায় আসলে দ্রুত পাল্টে যায় ব্যবসার ধরন। তিনি একে একে কম্বলের ধরণ বাড়াতে থাকেন। তারপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি এ তল্লাটের মানুষের। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার শিমুলদাইড় বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে ঝুট পল্লী।

আশপাশের ছালাভরা, কুনকুনিয়া, বর্শিভাঙ্গা, সাতকয়া, বিলচতল, ঢেকুরিয়া, পলাশপুর, বেলতৈল, শ্যামপুর, কবিহার, চালিতাডাঙ্গাসহ প্রায় তেত্রিশটি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার নারী-পুরুষ ঝুট কম্বলের কাজ করেন।  ঝুট মানে গার্মেন্টসের ফেলে দেওয়া ঝুট কাপড় বিশেষ কায়দায় সেলাই করে তৈরি করা হয় কম্বল। পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও সেলাই করেন। শুরু হয় সেলাই বিপ্লব। আর এই বিপ্লবের আশিভাগ কারিগর হলো মহিলারা।

কাজিপুরের এই ঝুট পল্লীতে শুরুতে শুধুমাত্র জোড়া কম্বল তৈরি হলেও সময়ের সাথে সাথে পাল্টেছে এর ধরণ। এখন শিশু পোশাকসহ ১৬১ প্রকারের কম্বল তৈরি হচ্ছে। সরাসরি চায়না থেকে কম্বল এখানে আসছে। সেইসাথে এবার শরিফ সোহেল নিজে কম্বল তৈরির কারখানা চালু করেছেন। সুতা এনে নিজেই তৈরি করছেন কম্বল। দামের ক্ষেত্রে আছে রকম ফের। এখানে শুধু আশি টাকা থেকে পৌণে ছয় হাজার টাকায় কম্বল বিক্রি করা হয়। শিশুদের জন্যে একটি পায়জামা ১২ টাকা থেকে দুইশ’ টাকা এবং জামা ৩০ টাকা থেকে চারশ’ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

বর্তমানে একটি চার হাত দৈর্ঘ্য ও পাঁচ হাত প্রস্থের লেপ বানাতে ১২শ’ থেকে দুই হাজার টাকা লাগে। অথচ একই সাইজের একটি ঝুট কম্বল একশ’ থেকে তিনশ’ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। ঝুট কাপড়ে বেশি জোড়া পড়লে প্রায় ৫ কেজি ঝুটে একটি কম্বল তৈরি করা যায়। গত বছর এই ঝুট প্রতি কেজি ১৭ থেকে ২২ টাকায় কেনা যেত। কিন্তু বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন

গরমের সময় প্রতি কম্বলের মজুরি ৩৫ টাকা এবং শীতের সময় ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। নারী শ্রমিকরা গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব কম্বল সেলাই করেন। ঝুট ব্যবসায়ী সংগঠনের সাবেক সভাপতি শরিফ সোহেল জানান, ঝুট কম্বলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে এর চাহিদা এখন বলতে গেলে দেশব্যাপী। গত দুই বছর কাজিপুর উপজেলার ইউএনও আমাদের তৈরি কম্বল দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে সকল ইউএনও, ডিসিদের পত্র প্রেরণ করেছিলেন।

এর ফলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখন আমাদের অর্ডার আসে। তিনি জানান, বছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দিনে প্রায় কোটি টাকার কম্বল এই বাজার থেকে দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। তিনি জানান, এখন কাঁচামালের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ঝুট কাপড় ভারতে যাওয়ার কারণে এখন বেশি টাকা দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। সরকার এই অঞ্চলকে ঝুটপল্লী (বিসিক শিল্প নগরী) হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সহজ শর্তে ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থার করার দাবি জানান তিনি।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান আকরামুল হক জানান, সারাদেশে শিমুলদাইড় বাজারের নাম ছড়িয়ে পড়েছে ঝুট শিল্পের কারণে। ঝামেলামুক্ত পরিবেশে শ্রমিকেরা এখানে কাজ করছেন দিনরাত। তাদের যাপিত জীবনে এসেছে পরিবর্তন। প্রতিটি পরিবারেরই এখন একটি কমন গল্প রয়েছে। সেই গল্পের শিরোনাম কেবলই সমৃদ্ধির কেবলই উন্নতির।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ

সংসদ নির্বাচনে এনসিপির আখতার হোসেন লড়বেন রংপুর-৪ আসনে

সড়কে ‘বোমা’ ফাটিয়ে ডাকাতি, এলাকায় আতঙ্ক

সাবেক এমপি সাইফুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র

আবারও মিসাইল হামলা ইসরায়েলে, প্রতিশোধের অঙ্গীকার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

আজ আবার শুরু হচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক