আতঙ্কে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ
বগুড়ার শাজাহানপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবা

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শাজাহানপুরে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের কাজ। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে স্থাপিত ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কমিউনিটি হেল্থ প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীবৃন্দ।
কিন্তু প্রায় ২৮ বছর আগে নির্মিত এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলো অধিকাংশই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা পল্লি গ্রামের হাজারও মানুষ যেমন আতঙ্কে আছেন, তেমনি ক্লিনিকগুলোতে কর্মরত ব্যক্তিরাও জানমাল নিয়ে চরমনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জানা গেছে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৭ সালে সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয় এবং ১৯৯৮ সালের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) স্থাপন করে। সে মোতাবেক বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় ১৯৯৮ সালে ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়।
এর মধ্যে ২০২০ সালে ১টি (শৈলধুকরি সিসি) ও ২০২২ সালে ৪টি (খন্ডক্ষেত্র সিসি, কামারপাড়া সিসি, চকজোড়া সিসি এবং জোড়া সিসি) সহ মোট ৫টি সিসি ভবন পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ২০টি সিসি ভবন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। খোট্টাপাড়া সিসিতে গিয়ে দেখা গেছে, দেওয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ইটের দেয়ালের গাথুনী নড়বড় করছে। যে কোন সময় দেয়াল ধসে অথবা পলেস্তারা খসে পড়ে মানুষ হতাহত হতে পারে এমন আতঙ্কে আছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা গ্রামীণ মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ আব্দুস সোবহান জানান, গ্রামীণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ২০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সরকারি ছুটি ও শুক্রবার ছাড়া সিসিগুলোতে সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কমিউনিটি হেল্থ প্রোভাইডারগণ।
আরও পড়ুনএছাড়া সিসিগুলোতে সপ্তাহে ৩দিন ইপিআই টিকা প্রদানসহ স্বাস্থ্য শিক্ষা দিয়ে থাকে স্বাস্থ্য সহকারীরা এবং অপর ৩ দিন পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত সেবা দেন একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী। প্রতি মাসে প্রতিটি সিসিতে গড়ে ১২শ’ মানুষ প্রাথমিক চিকিসা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা নিয়ে থাকেন। সে হিসেবে প্রতিমাসে ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রায় ৩০ হাজার গ্রামীণ মানুষ সেবা গ্রহণ করেন। পক্ষান্তরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতি মাসে চিকিৎসা সেবা নেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশ সিসি থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করায় কমিউনিটি ক্লিনিকের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
পল্লি এলাকার মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি চিকিসা সেবা পৌঁছে দিতে সিসিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহনাজ পারভীন জানান, খোট্টাপাড়া সিসি, খলিশাকান্দি সিসি, খাদাস সিসি, আতাইল সিসি, জোড়া সিসি, পদ্মপুকুর সিসি, দেছমা সিসিসহ অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১০-১২টি ভবনের তালিকা তৈরি করে ভবন পুনর্নির্মাণের জন্য প্রায় এক বছর আগে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে তার প্রত্যাশা।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. শাহীন আলম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ সিসি ভবনগুলো পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্প অনুমোদন হয়নি।
মন্তব্য করুন