বগুড়ার শিবগঞ্জে আসামি ছিনিয়ে নেয়া মামলায় ২১ নারী-পুরুষ গ্রেফতার, এসআই মামুন প্রত্যাহার

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার শিবগঞ্জে পুলিশের ওপর গোবর ও কাদা নিক্ষেপ করে হাতকড়াসহ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় ২১ জন নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে এঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শিবগঞ্জ থানার এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
অপরদিকে, এসআই মামুন আওয়ামী লীগ নেতা রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে গ্রেফতার না করার আশ্বাস দিয়ে এক লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা।
গত শনিবার রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার চক ভোলাখাঁ গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় গ্রামের নারী-পুরুষ পুলিশের ওপর গোবর ও কাদা নিক্ষেপ করে রাজুকে হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদি হয়ে রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষের নামে থানায় মামলা করেন।
এরপর রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই গ্রামে পুলিশ কয়েক দফা অভিযান চালায়। এসময় গ্রেফতার করা হয় ১১ জন নারী ও ১০ জন পুরুষকে। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই চক ভোলাখাঁ গ্রামের বাসিন্দা। তারা পেশায় ভ্যানচালক ও দিনমজুর। আর নারীরা সকলেই গৃহিনী। তবে আওয়ামী লীগ নেতা রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে সোমবার পর্যন্ত পুনরায় গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতদেরক আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিবগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহিনুজ্জামান। এদিকে আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) চক ভোলাখাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ বাড়িতে তালা। কাউকে গ্রেফতার আবার কেউ গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িতে নেই। শিশু আর বৃদ্ধ ছাড়া গ্রামে কেউ নেই।
গত শনিবার রাতে প্রতক্ষদর্শী কয়েকজন স্কুল ছাত্র জানান, আওয়ামী লীগ নেতা রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুর বাড়িসংলগ্ন বাড়িতে তার মামাত ভাই শাহ আলমের বউ ভাত অনুষ্ঠান শেষ হয় শনিবার সন্ধ্যায়। একারনে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের ভিড় ছিল। রাত ৮টার দিকে রাজু বাড়ির পিছনে একটি মুদি দোকানে বসেছিলেন। এসময় মোটরসাইকেলযোগে সাদা পোশাকে এক ব্যক্তি এসে রাজুকে আটক করে এক হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মোটরসাইকেল ওঠায়।
আরও পড়ুনএমন সময় আসিফ নামে এক যুবক এসে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেন এবং রাস্তায় বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এতে ওই মহল্লা অন্ধকার হয়ে গেলে রাজু এক হাতে হ্যান্ডকাপ নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। রাজুর চিৎকারে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা এসে ওই ব্যক্তির চোখে মুখে গোবর এবং কাদা নিক্ষেপ শুরু করে। কিছুক্ষণ পর থানা পুলিশের গাড়ি এসে তাকে উদ্ধার করে।
শিবগঞ্জ থানা পুলিশের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা রাজু বিয়ের অনুষ্ঠানে আছেন এমন তথ্য পেয়ে তাকে গ্রেফতার করতে থানার এসআই রাজীব কৃষ্ণ ধরের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের একটি টিম পুলিশের গাড়িযোগে চক ভোলাখাঁ গ্রামের দিকে রওনা দেন। কিন্তু তার আগেই এসআই মামুন থানার কাউকে না জানিয়ে সাদা পোশাকে একাই মোটরসাইকেলযোগে সেখানে গিয়ে রাজুকে আটক করে।
প্রতিবেশীরা জানান, রাজু বাড়িতেই থাকতেন। থানা পুলিশের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। গ্রেফতার না করার জন্য এক সপ্তাহ আগেই এসআই মামুন রাজুর কাছ থেকে একলাখ টাকা নিয়েছেন। তারপরে এসআই মামুন একাই এসে রাজুকে আটক করায় রাজুর বাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর গোবর ও কাদা মাটি নিক্ষেপ করে রাজুকে হাতকড়াসহ পালাতে সুযোগ করে দেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্যদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন