ভিডিও বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

মিয়ানমারের ভেতরেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান : ইউএনএইচসিআর প্রধান

মিয়ানমারের ভেতরেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান : ইউএনএইচসিআর প্রধান, ছবি: সংগৃহীত।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের ভেতরেই কেবল রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি।

মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেন, সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশার অবসান হবে না। এই সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে। আর সমাধানও সেখানেই। ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, আট বছর আগে মিয়ানমারের সেনাদের নৃশংস সহিংসতার কারণে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। এছাড়া অনেকেই রাখাইন রাজ্যের ভেতরেই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়ে গিয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশিরভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিলেও রোহিঙ্গাদের অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি। তিনি বলেন, তাদের প্রতিদিনের জীবন কেটে যাচ্ছে গ্রেপ্তার ও আটক হওয়ার ভয়ে। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় সীমিত প্রবেশাধিকার, চলাফেরায় নানা বিধিনিষেধ, জোরপূর্বক শ্রম ও নিয়োগের শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। প্রতিনিয়ত তারা বৈষম্য ও আতঙ্কের মুখোমুখি হচ্ছে।

ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দেশটি ইতোমধ্যে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০২৪ সালে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের পর আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করেছে। ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেন, বহু চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের সামনে একটি অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে। তারা দেখিয়েছে, যখন বিশ্বব্যাপী উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, তখনো মানবিক সহানুভূতি প্রদর্শন করা সম্ভব। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে জীবন রক্ষা করে বাংলাদেশ তা প্রমাণ করেছে। তিনি বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রশংসা করেন। তবে একই সঙ্গে তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা তহবিলে ঘাটতি এখনো বিদ্যমান।

আরও পড়ুন

তিনি সতর্ক করে বলেন, পর্যাপ্ত তহবিল না পেলে জরুরি সহায়তা কমাতে হতে পারে। এতে শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা বাড়বে এবং আরও বেশি রোহিঙ্গা বিপজ্জনক সমুদ্রপথে জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে বাধ্য হবে। ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেন, যদি পর্যাপ্ত তহবিল না পৌঁছায়, তাহলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমাদের কিছু জরুরি সহায়তা কাটছাঁট করতে হতে পারে। তা সত্ত্বেও আমরা শিশুদের অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর ঘটনা এবং বিপজ্জনক নৌযাত্রায় রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি রোধ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। তিনি বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে তহবিল জোগানো, পুনর্বাসন উদ্যোগ ত্বরান্বিত করা, এবং রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা ও শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়াতে আহ্বান জানান। তবে গ্রান্ডি জোর দিয়ে বলেন যে শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা দিয়ে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান আনা যাবে না।

রাখাইন উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলো এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তা দিকনির্দেশক হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন গ্রান্ডি। তিনি সতর্ক করে বলেন, সাহসী পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন আসবে না। তিনি প্রভাবশালী দেশগুলোকে আহ্বান জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হতে, যাতে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায়। একই সঙ্গে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব দেন ইউএনএইচসিআর প্রধান।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জুলাই আন্দোলনে নিহত শিশুদের পরিবারকে সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা ও বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা তারেক রহমানের

বেনীপুর সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ

পাহাড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা

স্ত্রীর নামে কেনা লটারির টিকিটে বাজিমাত বাংলাদেশি প্রবাসীর

অনুপ্রবেশকারীদের কারণে হুমকির মুখে ভারত: নরেন্দ্র মোদি