‘জলাতঙ্ক নির্মূলে কাজ করি সবাই মিলে’
বগুড়ায় বেড়েছে কুকুরের তুলনায় বিড়াল কামড়ানো রোগীর সংখ্যা

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়াসহ প্রায় সারাদেশে কুকুরের পাশাপাশি বিড়ালের আঁচড় এবং কামড়ের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে উদ্বেগজনকহারে। এছাড়াও আছে শিয়াল, বেজিসহ আরও কিছু প্রাণির কামড়ের রোগী। দীর্ঘদিন কুকুরের ভাকসিন দেওয়া বন্ধ থাকায় পাড়া-মহল্লায় দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো কুকুরের দল পথচারীদের মাঝে মাঝেই আক্রমণ করে কামড়ে দিচ্ছে।
শহরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বিড়ালের আঁচড় দেওয়া রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে ১৫ বছর বয়সের চেয়ে কম বয়সি কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ৪০ ভাগের বেশি। বিশ্বে এ রোগে এখনও প্রতি মিনিটে ৯ জন এবং বছরে ৫৯ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যদিও দেশে এখন সেই চিত্রের পরিবর্তন এসেছে। সেই সঙ্গে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে সরকারের টিকা কার্যক্রমের স্বাভাবিক থাকায় জলাতঙ্কের আক্রান্তের হার কমে এসেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ‘জলাতঙ্ক নির্মূলে কাজ করি সবাই মিলে’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সারা বিশ্বের সাথে আজ দেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, বগুড়াসহ আশেপাশের জেলা- জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ থেকে প্রায় প্রতিদিন নতুন পুরাতন মিলে ১২০ থেকে প্রায় ২শ’ রোগী এন্টির্যাবিস ভ্যাকসিন নিতে আসেন।
এর মধ্যে বেশিরভাগই বিড়ালের আঁচড় ও কামড়ানো রোগী। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা। এরমধ্যে নতুন রোগী আসেন ৪০ থেকে ৮০ জন। ভ্যাকসিনের একটি ভ্যায়েল চারজন রোগীকে ভাগ করে দেওয়া হয়। এভাবে আরও তিন ডোজসহ মোট চার ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৭৯৪ জন কুকুর, বিড়াল ও অন্যান্যা প্রাণির কামড়ের রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
আরও পড়ুনবেশি ক্ষত হওয়া রোগীকে আরআইজি (র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিন) টিকা দেওয়া হয় এবং আঁচড় এবং কম ক্ষত রোগীদের দেওয়া হয় আরআইজি’র ভ্যাকসিন। এদের বেশিরভাগকে ভ্যাকসিনেশন সেন্টার থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আরএমও ডা. রাশেদুল ইসলাম রনি জানান, হাসপাতালের কুকুর ও অন্যান্য প্রাণির কামড় দেওয়া রোগীদের প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা ও টিকা কার্যক্রম চালানো হয়। ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা ইনজেকশন অ্যান্টি র্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) ও কামড়ের ধরন অনুযায়ী ইনজেকশন র্যাবিস ইমুনোগ্লোবুলিন (আরআইজি) প্রদান করা হচ্ছে।
বর্তমানে হাসপাতালে ভ্যাকসিন সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার মানুষ জলাতঙ্কে প্রাণ হারাতেন। গবাদি প্রাণির মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান এখনও অজানা, যার অর্থনৈতিক মূল্য অপরিসীম। জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যু অনিবার্য হলেও এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। এই রোগ প্রতিরোধের সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান কুকুরকে নিয়মিত জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকাদান এবং আক্রান্তদের এন্টির্যাবিস ভ্যাকসিন গ্রহণ। ফলে জলাতঙ্ক ভাইরাস কুকুর থেকে কুকুরে কিংবা মানুষে সংক্রমিত হতে পারে না।
মন্তব্য করুন