বগুড়ায় এবার দেড়শ’ কোটি টাকার আগাম শীতকালিন সবজি চাষের লক্ষ্য

স্টাফ রিপোর্টার : প্রকৃতিতে শরৎকাল চললেও এবার বৃষ্টির প্রভাব রয়েছে বর্ষাকালের মতই। শরতেও বৃষ্টির প্রভাব থাকায় এবার আগাম শীতকালিন বা খরিপ-২ মৌসুমের ফসল চাষ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তারপরেও উঁচু জমিতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষে কঠোর পরিশ্রম করছেন বগুড়ার কৃষকরা। অল্প সময়ে কম খরচে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমাটো, শিম, মুলা, পালংশাকসহ শীতকালিন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ার আশায় জমিতেই সময় পার করছেন তারা।
বগুড়া সদর, গাবতলী, শাজাহানপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, গাজর, বেগুন মুলাসহ হরেক রকম সবজির চাষাবাদ। সাতসকালে সবজি খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণী। কেউ নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ কীটনাশক ছিটাচ্ছেন, আবার কেউ জমিতে আটকে থাকা বৃষ্টির পানি বের করে দিচ্ছেন। আবার কেউ খেত থেকে সবজি তুলে বিক্রির জন্য বাজারে নিচ্ছেন। অনেকে নতুন করে শীতকালীন সবজির চারা রোপণেও ব্যস্ত।
কৃষকরা বলছেন, আবহাওয়া কিছুটা বৈরি হওয়ায় এবার আগাম শীতকালিন সবজি চাষে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এমন আবহাওয়ার কারণে পরিশ্রমও বেশি করতে হচ্ছে। তারপরেও স্বল্প সময়ে শীতকালিন সবজির আগাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। প্রতি বিঘায় সবজি উৎপাদনে যে খরচ, মাঠ থেকেই তা প্রায় দ্বিগুণ দামেই বিক্রি হয়। আর স্বল্প সময়েই বাজারজাত করা যায় বলে এসব সবজি চাষে ঝুঁকেছেন তারা।
বগুড়া সদরের শ্যামবাড়িয়ো এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন করি। আগাম শীতকালিন সবজির মধ্যে-ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, পালংশাক ও ধনেপাতার আবাদ করি। বাজারে প্রতিটি সবজিরই ব্যাপক চাহিদার সাথে দামও ভালো পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, তবে এবার বৃষ্টি বেশি। নিচু জমিগুলোতে পানি জমে থাকার মতো বৃষ্টি হচ্ছে, আবার উঁচু জমিতে পানি না জমলেও বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুনশাজাহানপুরের ঢাকন্তা এলাকার কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, এবার বৃষ্টি বেশি। তারপরেও আগাম শীতকালিন সবজি চাষে লাভ বেশি হওয়ায় জমিতেই বেশি সময় ব্যয় করছি। মৌসুমের শুরুতে মুলা তুলতে পারলে বিক্রির জন্য বাজারে যেতে হয় না। ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই কিনে নিয়ে যান। পরিবহন খরচসহ বাজার যাওয়ার ঝামেলা না থাকায় লাভও তুলানামূলক বেশি হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া সূত্রে জানা গেছে, চলতি খরিপ-২ বা আগাম শীতকালিন সবজি চাষ মৌসুমে বগুড়ায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে, এই কার্যক্রম চলবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। গত বছর ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালিন সবজি চাষ হয়। এবার প্রতি কেজি সবজির উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ২৭-২৯ টাকা। হেক্টর প্রতি ফলন ধরা হয়েছে সাড়ে ১৭ মেট্রিকটন। সূত্র বলছে, প্রতি কেজি সবজির গড় মূল্য ৪০-৪৫ টাকা ধরলে এবার জেলায় দেড়শ’ কোটি টাকার বেশি শীতকালিন সবজি উৎপাদন হবে।
এই কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার শরৎকালে বৃষ্টি কিছুটা বেশি। এতে খরিপ-২ মৌসুমে সবজি চাষাবাদে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও, তা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় কোন প্রভাব ফেলবে না। তিনি আরও বলেন, আগাম জাতের সবজি চাষে দেশ একদিকে যেমন সবজিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা। তাই এর উৎপাদন আরও বাড়াতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
মন্তব্য করুন