ডাকসুর ঘোষিত ফলাফলে মিললো প্রাক-জরিপের পূর্বাভাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ এর ভূমিধস বিজয় নির্বাচনের আগে পরিচালিত একাধিক প্রাক-নির্বাচনী জরিপের ফলাফলের সঙ্গে মিলে গেছে। বেশিরভাগ জরিপেই এই জোটের প্রার্থীদের এগিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল এবং নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলও সেই চিত্রই নিশ্চিত করেছে।
নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট জয়লাভ করে। তাদের প্রার্থীরা জরিপে পাওয়া সমর্থনের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, এই প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে আবু সাদিক কায়েম মোট ভোটের ৪৭ শতাংশ, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস. এম. ফরহাদ ৩৬ শতাংশ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মহিউদ্দিন খান ৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনের আগে চারটি প্রধান জরিপে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীদের জয়লাভের এমন ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছিল।জরিপগুলোর মধ্যে প্রথমটি পরিচালনা করে ‘সোচ্চার’ নামের একটি সংগঠন। তাদের এ জরিপে অংশ নেন ৯৯১ জন শিক্ষার্থী।
জরিপটিতে দেখা যায়, ভিপি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী এগিয়ে থাকবেন বলে মত দেন ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ছাত্রদল-সমর্থিত প্রার্থীকে এগিয়ে রেখেছেন মাত্র ৭ শতাংশ। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ছিলেন ২২ শতাংশ এবং কোনো মতই দেননি ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা।
এছাড়া ডাকসু নিয়ে আরও একটি জরিপ পরিচালনা করেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ’। এই জরিপে ৯০০ শিক্ষার্থীর মতামত নেওয়া হয়। এখানে ২০.৯২ শতাংশ উত্তরদাতা ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটকে ভোট দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। অন্যদিকে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল ১৬.৪২ শতাংশ, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩৮.৮৫ শতাংশ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ৪.৭৬ শতাংশ, সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ ১.৬০ শতাংশ এবং সাত বাম সংগঠন সমর্থিত জোট ২.১০ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা দেখানো হয়।
আরও পড়ুনআবার ‘ন্যারেটিভ’ নামের প্ল্যাটফর্মের জরিপে ভিপি পদে আবু সাদিক কায়েমকে এগিয়ে রেখেছেন ৪১.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। শামীম হোসেন পেয়েছেন ১৬.৫ শতাংশ, আবিদুল ইসলাম ১৩.৯ শতাংশ এবং উমামা ফাতেমা ৮.৮ শতাংশ সমর্থন। একই জরিপে জিএস পদে এস. এম. ফরহাদকে এগিয়ে রেখেছেন ৩২.১ শতাংশ শিক্ষার্থী, যেখানে অন্য প্রার্থীরা তুলনামূলক কম সমর্থন পান। এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন ৫২.৯ শতাংশ সমর্থন নিয়ে।
অন্যদিকে দেশের পরিচিত ফ্যাক্ট-চেকার কদরুদ্দিন শিশিরের নেতৃত্বাধীন ‘দ্য ডিসেন্ট’ পরিচালিত জরিপে ভিপি পদে সাদিক কায়েম পান ২৯.৬ শতাংশ সমর্থন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পান ১৯.৪ শতাংশ, ছাত্রদল-সমর্থিত আবিদুল ইসলাম ১৪.৩ শতাংশ এবং উমামা ফাতেমা ১২.২ শতাংশ সমর্থন পান। একই জরিপে জিএস পদে ফরহাদকে সমর্থন জানান ২৫.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান এগিয়ে ছিলেন ২৫.৭ শতাংশ ভোট নিয়ে।
যদিও বাংলাদেশ পাবলিক একাডেমি এবং ‘বেসরকারি’ নামের দুটি জরিপে ছাত্রদলের প্রার্থীকে সম্ভাব্য বিজয়ী দেখানো হয়েছিল, কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল অন্য চারটি জরিপের পূর্বাভাসকেই সত্য প্রমাণ করেছে। সামগ্রিকভাবে, জরিপগুলোতে পাওয়া সমর্থনের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা ভিপি, জিএস এবং এজিএসসহ বেশিরভাগ পদে জয়লাভ করেছেন।
মন্তব্য করুন