ভিডিও রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ধার-দেনা করে শুরু, পোনাচাষি আব্দুর রশীদ এখন কোটিপতি 

ধার-দেনা করে শুরু, পোনাচাষি আব্দুর রশীদ এখন কোটিপতি 

বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি: বছর বিশেক আগে পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর পূর্বপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রশীদের জীবন ছিল অভাবে ভরা। কখনও অন্যের জমিতে কাজ করে আবার কখনও ফেরি করে মাছ বিক্রি করে দিন চলত তার। অথচ সেই অবস্থা থেকে আজ কয়েক কোটি টাকার মালিক তিনি। সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরা জীবন তার।

আব্দুর রশীদের এই উত্থানের শুরু ২০০৭ সালে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) একটি মাছ চাষ বিষয়ক বিজ্ঞাপন দেখে। বিজ্ঞাপনে অনুপ্রাণিত হয়ে গরু বিক্রি ও ধারদেনা করে সংগ্রহ করা সাত হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন মাছের পোনা উৎপাদন। এরপর থেকে আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিকই হননি, তিনি বিভিন্ন এলাকার পোনাচাষির অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

আব্দুর রশীদ জানান, এলাকার একজনের কাছ থেকে ৮ শতাংশ জমির একটি পুকুর লিজ নেন দেড় হাজার টাকায়। এরপর বাবার দেয়া একটি বকনা গরু বিক্রি করে ও ধারদেনা করে পুকুরে ডিমপোনা ছাড়েন। মাত্র পাঁচ মাসেই প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয় তার। এই ছোট সফলতাই তার আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি গড়ে তোলে।

প্রথম বছরের লাভের টাকা দিয়ে আরও তিনটি পুকুর লিজ নিয়ে পোনাচাষ শুরু করেন রশীদ। মাস ছয়েক পরে তিনি সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেন ৫৫ হাজার টাকা। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘প্রোগ্রামস ফর পিপলস ডেভেলপমেন্ট’ (পিপিডি)-এর পরামর্শে ও সহযোগিতায় এভাবেই তিনি ধাপে ধাপে বাড়াতে থাকেন খামারের পরিধি।

এখন তার মালিকানায় রয়েছে তিনটি পুকুর। লিজ নিয়েছেন আরও ২২টি পুকুর। মোট ২৫টি পুকুরে বছরে পাঁচ থেকে সাত ধাপে ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি কার্প জাতীয় মাছের ডিমপোনা ছাড়েন তিনি। প্রতি কেজি ডিমপোনার দাম পড়ে প্রায় ৫ হাজার টাকা। এক মাসেই এসব পোনা এক থেকে দেড় ইঞ্চি আকারের হয়ে যায়, তখন থেকেই শুরু হয় বিক্রি। পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের খামারিরা তার কাছ থেকে পোনা কিনে নেন সারা বছর।

আরও পড়ুন

আব্দুর রশীদের হিসাবে, বর্তমানে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার পোনা বিক্রি করেন তিনি। সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে তার লাভ থাকে ২৫ লাখ টাকার মতো। সংসারের খরচ মিটিয়ে এই টাকায় প্রতিবছর জমি কেনেন তিনি। এখন তার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

আব্দুর রশীদ বলেন, ‘খালি হাতে শুরু করেছিলাম। আল্লাহ আমার পরিশ্রমকে বৃথা যেতে দেননি। মাছের পোনা চাষে পরামর্শ নেওয়ার জন্য এখন অনেকেই আমার কাছে আসে। আমি তাদেরকে সাধ্যমতো সহায়তা করি। প্রতিবছর লাভের টাকায় জমি কিনি। তবে আমার সফলতার পেছনে অনেক কষ্ট আছে।’

পিপিডির মৎস্য কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘একটি ছোট পুকুর দিয়ে শুরু করে আব্দুর রশিদ ২৫টি পুকুরের মালিক। আমরা তাকে শুরু থেকেই পরামর্শ দিয়েছি, সেমিনারে অংশ নিতে উৎসাহিত করেছি। তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। অনেকেই তার দেখানো পথে আগাতে শুরু করেছেন।’

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

তৌহিদ আফ্রিদি ইস্যুতে মুখ খুললেন দীঘি

ক্যালেন্ডার মেনে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণ, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সভা

বগুড়ার আদমদীঘিতে ট্রাক-ট্রাক্টর সংঘর্ষে নিহত ১