আজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় টেকসই সমাধানের পথ খুঁজছে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে কক্সবাজারে শুরু হতে যাচ্ছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট উখিয়ার ইনানীতে হোটেল বে-ওয়াচ মিলনায়তনে স্টেকহোল্ডারসদের নিয়ে এই ডায়ালগের আয়োজন করছে রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দফতর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক জান্তার নির্মম নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এরপর আশ্রিত জীবনে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে অনেকটা বিষিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি এবং ভয়াবহ মাদকের আগ্রাসনে উখিয়া-টেকনাফের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। এই যখন অবস্থা তখন ‘টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগের আসর বসছে কক্সবাজারে। যেখান থেকে ভালো কিছু হতে পারে বলে আশায় বুক বাঁধছেন রোহিঙ্গারা। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মোহাম্মদ জুবাইর বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্সবাজারের ইনানীতে হচ্ছে জেনে খুব ভালো লাগছে। ওখানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা যদি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে যান, তাহলে বাস্তবতা দেখে যেতে পারবেন। উক্ত সম্মেলনটি আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এরকম সম্মেলন চলমান থাকলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারবে।’
এআরএসপিএইচ-এর সদস্য নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তাড়াতে মিয়ানমারের কৌশলে হাত দেওয়ার ক্ষমতা কারোর নেই। আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুর বিষয়টি উঠে আসলে নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে জান্তা সরকার নানা ফন্দি বের করে।’ আরাকান আর্মির যুদ্ধও জান্তা সরকারের নাটক বলে অবহিত করেন তিনি।
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন, ‘সম্মেলনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হউক।’উখিয়ার কুতুপালং ২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-ব্লকের রোহিঙ্গা নারী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুঃখের কাহিনি আর বলতে ভালো লাগে না। বিশ্বের এত বড় বড় ক্ষমতাবানরা থাকতে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি বলেন-জান্তা সরকার বলেন, তাদের চাপ দিতে পারছেন না কারণ কী? আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরবাসে আর কতদিন কাটাবো।’
আরও পড়ুনআগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে নিউইয়র্কে উচ্চপর্যায়ের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সম্মেলনের প্রস্তুতিস্বরূপ কক্সবাজারের এই সম্মেলন উল্লেখ করে কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা শরণার্থী কার্যালয়ের কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘২৪ আগস্ট বিকাল থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত বিদেশি অতিথি আর আমাদের প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন। এতে অন্তত একশ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ যারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিনিধিত্ব করেন তাদের উপস্থিত করা হবে। মূলত তাদের মুখ থেকে শুনতে চাইবেন কীভাবে তাদের প্রত্যাবাসন করা হবে। এই সম্মেলনটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মনোবল শক্ত করা। কীভাবে তাদের সহযোগিতা করা যায়, সেসব কথা জানতে চাওয়া হবে।’
২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন জানিয়ে মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে সরকারপ্রধানের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিক্ষাবিদ এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।’
মন্তব্য করুন