বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি আতঙ্কিত এলকাবাসী

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : সারিয়াকান্দিতে চুরির সাথে সাথে দিনদিন বেড়েই চলেছে ডাকাতির মতো ঘটনাও। এসব ঘটনায় নিজেদের জান মালের নিরাপত্তায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী। এ বিষয়ে অভিযোগ করেও মিলছে না সুরাহা।
বগুড়া সারিয়াকান্দির প্রতিটি ইউনিয়নে চুরির ঘটনা নিত্যদিনের চিত্র। গত ৪ দিন আগে সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামে একই রাতে চারটি বাড়িতে চুরি হয়েছে। একরাতে এ গ্রামের মোহাম্মদ আলী, ফারুক মিয়া, মুনজিল আলী এবং আলী হোসেনের বাড়ির গৃহস্থালি জিনিসপত্র, মোবাইল এবং সোনার গহনা চুরি হয়েছে। গত একমাস আগে এ গ্রামের চাঁন বাদশার দোকান চুরি হয়েছে, এতে তার কয়েক লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়েছে।
গত ২ মাস আগে এ গ্রামের হাজিপাড়ার আব্দুস সালামের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চুরি হয়েছে। চোরকে ধরতে গিয়ে তার ডান পা ভেঙে গেছে। রোজগার না থাকায় এতে তিনি বেশ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত রোববার দিনে দুপুরে পৌর এলাকার সাহাপাড়া গ্রামের শিক্ষক প্রণব কুমার রায়ের ২০ ভরি সোনার গহনা চুরি হয়েছে। এছাড়াও পৌর এলাকাতেও বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
গত কয়েকদিন আগে সারিয়াকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি সিলিং ফ্যানসহ কয়েকটি জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। কুটিবাড়ী মসজিদের সোলার প্যানেলও চুরি হয়েছে। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর ৭ টি প্লাস্টিকের চেয়ার চুরি হয়েছে। এ এলাকার আব্দুর রউফ জানান, পৌর এলাকায় অন্তত ৭ টির বেশি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চুরি হয়েছে। যার চালকরা তাদের পরিবার নিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
গত ১ জুলাই হাটশেরপুর ইউনিয়নের চর নয়াপাড়া গ্রামের খাজা আকন্দের গোয়াল ঘর থেকে নতুন কিনে আনা কুরবানির গরুসহ গোয়ালের ৩ টি গরু চুরি হয়েছে। গত ১ মাস আগে কামালপুর ইউনিয়নের কড়িতলা বাজারে একটি দোকানের মালামাল চুরি হয়েছে। ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের জোরগাছা পশ্চিম পাড়া গ্রামে একটি গরু চুরিসহ বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ উপজেলার চরাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। চরাঞ্চলে বৈদ্যুতিক মোটর চুরির ঘটনা ঘটছে অহরহ।
গত কয়েকদিনে বোহাইল ইউনিয়নে অন্তত: ১০ টি মোটর চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিব হাসান। তিনি জানান, গত কয়েকদিন আগে শংকরপুর চরে ৩ টি দোকানের মালামাল চুরি হয়েছে। এ বিষয়ে কোর্টের রয়েছে। গত ২ মাস আগে ফুলবাড়ি ইউনিয়নের আমতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফ্যান, মোটরসহ বেশকিছু জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। গত ১৭ জুন তারিখে কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের আয়েন উদ্দিনের ২ টি গরু চুরি হয়েছে। একই মাসে মূলবাড়ী নৌঘাটে ২ টি নৌকা চুরির ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুনগত মে মাসে সদর ইউনিয়নের প্রেম যমুনার ঘাটের সামনের চর থেকে একটি গরুর বাথান থেকে ২ টি গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত মার্চ মাসে কাজলা ইউনিয়নের জামথল নৌঘাটের সামনে একটি চরে রাতের আঁধারে একটি মহিষের বাথান থেকে ৩ টি গরু ডাকাতি করা হয়েছে, এদিন মহিষের বাথানের মালিক আসাদুল মিয়া এবং তার দুই ছেলেকে হাতপা বেঁধে মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়েছিল।
পরে তারা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয়েছেন। এ ইউনিয়নের কালাম মিয়া জানান, গত কয়েকমাসে কাজলার চরাঞ্চল থেকে শতাধিক কৃষকের বিদ্যুৎ চালিত মোটর চুরি হয়েছে। উপজেলার নারচী ইউনিয়নসহ সবগুলো ইউনিয়নেই একাধিক চুরির ঘটনা শোনা যায়। এছাড়া গত কয়েকদিন আগে কয়েকজন মহিষের রাখালকে রাতের আঁধারে বাথান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
চরাঞ্চলের আয়েন উদ্দিন বলেন, আমরা চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত চুরির আতঙ্কে দিনাতিপাত করছি। চোরের ভয়ে আমাদের ফসল বা গরু বিক্রির টাকাপয়সা আমরা মাটিতে পুঁতে রাখি।
প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনও সুরাহা পওয়া যায় না। পৌর নিবাসী আব্দুর রউফ বলেন, থানার ২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই বেশি চুরি সংগঠিত হচ্ছে। তাহলে রাতের টহল পুলিশ কি কাজ করে। তাছাড়া চোর ধরে চালান করলে তারা কয়েক দিনেই জামিনে মুক্তি পায়। আমরা এলাকাবাসী এখন চোর আতঙ্কে রয়েছি এবং ব্যাপক অনিরাপত্তায় দিনাতিপাত করছি।
সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম বলেন, চুরির অভিযোগ বা মামলা পাওয়া মাত্রই আমরা চোর শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে তৎপরতা চালাই। এলাকায় চুরি ডাকাতি বন্ধে আমাদের টহল টিম সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। ২০ ভরি সোনার গহনা চুরির ঘটনায় একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন