ভিডিও শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি-জিএসের লড়াই জমে উঠছে, আলোচনায় ডজনখানেক ছাত্রনেতা

ছবি : সংগৃহীত,ডাকসু নির্বাচনে ভিপি-জিএসের লড়াই জমে উঠছে, আলোচনায় ডজনখানেক ছাত্রনেতা

ঢাবি প্রতিনিধি : বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মোট ৩৭ বার। এর মধ্যে ২৯ বারই ছিল ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে। অথচ ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরে মাত্র ৮ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে এই নির্বাচন। ফলে সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব অনেক সময় অনুপস্থিত থেকেছে।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসুর নির্বাচনের কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের মার্চে। এরপর দীর্ঘ ৫ বছর এই নির্বাচন ঝুলে থাকে। তবে সময়ের পালাবদলে পরিবর্তন এসেছে প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে। ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বাধীন বর্তমান প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক ভূমিকা নিচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুলাইয়ের যেকোনো সময় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যেই ১০ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং হলভিত্তিক কর্মকর্তাও নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে প্রশাসন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “আমরা চাই, সবার অংশগ্রহণে এক আনন্দঘন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। আগের অভিজ্ঞতায় কিছু নেতিবাচক দিক ছিল—বিশেষ করে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার আমরা নিশ্চিত করতে চাই, নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। প্রশাসনের কোনো আলাদা এজেন্ডা নেই।”

ভিপি-জিএস পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু:

ডাকসু নির্বাচনের খবরে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে সরব হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ভিপি ও জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আলোচনায় রয়েছেন অন্তত ডজনখানেক ছাত্রনেতা।

ছাত্রদলের পক্ষে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান এবং কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক শেখ তানভীর বারী হামিম। শিপন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী। আবিদুল ইসলাম (২০১৫-১৬, ইসলামিক স্টাডিজ) গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলোচনায় আসেন তার “প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যেয়েন না” আহ্বান দিয়ে। আর হামিম শিক্ষার্থীদের কল্যাণে গঠিত কমল মেডিএইডের মাধ্যমে কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন প্রতিস্থাপন, বিনামূল্যে লেবু পানি বিতরণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

ছাত্রশিবির থেকে আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক ঢাবি সভাপতি আবু সাদিক কায়েম (২০১৬-১৭, রাষ্ট্রবিজ্ঞান)। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন শাখা সভাপতি এসএম ফরহাদ (২০১৭-১৮, সমাজকল্যাণ), যিনি বিতার্কিক হিসেবেও পরিচিত।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার (২০১৯-২০, ভূতত্ত্ব) ও ঢাবি আহ্বায়ক আব্দুল কাদের (২০১৮-১৯, সমাজকল্যাণ) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আলোচনায় রয়েছেন। কাদের ‘আট দফা’ প্রস্তাবনার মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। বাকের মজুমদার দায়িত্ব পালন করেন আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে।

নারী নেতৃত্বেও আলোচনায় রয়েছেন উমামা ফাতেমা (২০১৮-১৯, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। নারী অধিকারসহ শিক্ষার্থীদের নানা দাবিতে সরব থাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

আরও পড়ুন

ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা (২০১৪-১৫, লোকপ্রশাসন) আলোচনায় রয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় থাকার কারণে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও একাধিক মামলার আসামি হলেও এখনও সক্রিয়ভাবে ক্যাম্পাসে কাজ করে যাচ্ছেন। তার উদ্যোগেই ডিজিটাল স্যানিটারি ন্যাপকিন মেশিন স্থাপন করা হয়েছে প্রতিটি মেয়েদের হলে।

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ (২০১৮-১৯) ‘শিক্ষণ’ ও ‘আস্ সুফফাহ ইসলামিক ইনস্টিটিউট’-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। তিনি সম্মিলিত ডাকসু আন্দোলনের ব্যানারে সক্রিয়। ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু (২০১৫-১৬, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন) এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ (২০২১-২২) আলোচনায় থাকা অন্য দুই মুখ। মুসাদ্দিক ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলসহ নানা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

নেতৃত্ব বাছাইয়ে ছাত্রসমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন:

সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবার দলীয় পরিচয়ের চেয়ে কার্যকর নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মাহতাপ ইসলাম বলেন, “যারা ক্যাম্পাসকে বহিরাগতমুক্ত, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব রাখতে কাজ করবে এবং একটি আদর্শ ক্যাম্পাস নির্মাণে সচেষ্ট থাকবে, আমরা সেই নেতৃত্ব চাই।”

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম দৈনিক করতোয়াকে বলেন, “ডাকসুতে এমন নেতৃত্ব দেখতে চাই, যারা শিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণে নিবেদিত থাকবে।”

তফসিল ঘোষণা শিগগিরই:

ডাকসু নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, “তফসিল ঘোষণার আগে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সেটি করা হবে। এরপর একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, আগস্টের শেষ সপ্তাহ অথবা সেপ্টেম্বরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের ভগ্নদশা

মেটিকুলাস ডিজাইনে সমস্যা কোথায়: মাহফুজ আলম

নওগাঁর মান্দায় নিষিদ্ধ জালে নিধন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির পোনামাছ

সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৪৮৭

টি-টোয়েন্টি দলে ফিরলেন নাঈম-সাইফউদ্দিন

বগুড়ায় সেনা অভিযানে অপহৃত তিন শিক্ষার্থী উদ্ধার : অস্ত্রসহ ৪ অপহরণকারী গ্রেফতার