জিন জাতি কি জান্নাত ও জাহান্নামে যাবে?

আল্লাহ তাআলা মানব জাতির মতো জিন জাতিকেও তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন এটি কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি জিন ও মানব জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। (সুরা আয-যারিয়াত: ৫৬)
জিন জাতির যারা আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হবে আল্লাহ তাআলা তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন এই ঘোষণাও আমরা কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতে পাই। আল্লাহ তাআলা বলেন, অবশ্যই আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব জিন এবং মানবজাতি উভয়কে দিয়ে। (সুরা হুদ: ১১৯)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর অবশ্যই আমরা অনেক জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। (সুরা আ’রাফ: ১৭৯) কিন্তু জিন জাতি জান্নাতে যাবে কি না এ ব্যাপারে কোরআনে বা গ্রহণযোগ্য সূত্রে বর্ণিত কোনো হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়নি। তাই এ ব্যাপারে আলমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো, মানুষের মতো তারা যেমন আল্লাহর ইবাদতের জন্য সৃষ্ট এবং অপরাধ করলে জাহান্নামে যাবে, তারা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করলে জান্নাতেও যাবে।
সুরা আর-রাহমানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আর যে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে, তার জন্য থাকবে দু’টি জান্নাত। (হে জ্বিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে? (সুরা আর-রহমান: ৪৬, ৪৭)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা জান্নাত দান করার সুসংবাদ দেওয়ার পর জিন ও মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা আমার নেয়ামত কীভাবে অস্বীকার করবে? সুতরাং সুস্পষ্টভাবে না হলেও এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, মানব জাতির মতো জিন জাতিও জান্নাতেও যাবে।
আরও পড়ুনএ ছাড়া কেউ কেউ বলেছেন, তারা জান্নাতে যাবে না, তবে জান্নাতের উপকণ্ঠে থাকবে, জান্নাতবাসী তাদের দেখতে পাবে, তারা জান্নাতবাসীকে দেখতে পাবে না। অনেকে বলেছেন, জিন জাতির নেককার সদস্যরা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী জায়গা আ’রাফে থাকবে। আবার অনেকে বলেছেন, এ বিষয়টি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো, আল্লাহই ভালো জানেন তিনি তাদের জান্নাত দান করবেন কি না।
কোরআন শুনে যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছিল একদল জিন
সুরা জিন নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কোরআন নাজিল শুরু হওয়ার পর জিনদের আসমানি খবরাখবর শোনার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করা হয়। আকাশের কাছে পৌঁছলেই তাদের লক্ষ করে অগ্নিপিণ্ড ছোড়া হতো। জিনরা তখন বুঝতে পারে পৃথিবীতে কোনো নতুন ঘটনা ঘটার কারণেই এটা হচ্ছে। তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে এর কারণ খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে।
তাদেরই একটি দল নাখলা নামক স্থানে এসে উপস্থিত হয়। সেখানে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ সময় সাহাবিদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। জিনদের ওই দলটি নামাজে নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোরআন পাঠ মনোযোগ দিয়ে শোনে এবং বলে, আসমানি খবরাখবর শুনতে আমাদের বাধা দেওয়ার কারণ মূলত এটিই। তারপর তারা তাদের জাতির কাছে ফিরে গিয়ে বলে, আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। এর ওপর আমরা ইমান এনেছি। আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরিক করব না।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তার নবির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওপর নাজিল করেন, ‘বলুন, আমার প্রতি ওহি প্রেরিত হয়েছে যা জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।’ (সহিহ বুখারি: ৪৯২১)
মন্তব্য করুন