বর্ষার আগমনে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত চলনবিলের কারিগররা

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়। আকাশে মেঘ জমলেও চলনবিলে এখনও পৌঁছায়নি বর্ষার সেই কাক্সিক্ষত পানির ঢল। তবে অপেক্ষায় নেই বিলপাড়ের মানুষ। বর্ষা আসবেÑএই বিশ্বাসে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় বাজারজুড়ে চলছে কাঠের নৌকা তৈরির ধুম। স্থানীয় কারিগররা দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন ছোট-বড় নানা সাইজের নৌকা।
বর্ষা মৌসুম জুড়ে চলনবিলের মানুষ নৌকা ব্যবহার করেন চলাফেরা ও মাছ ধরার কাজে। আর তাই এই মৌসুমে নৌকার চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। চাঁচকৈড় বাজারের নৌকা তৈরির কারখানাগুলোতে এই সময়টাতে দেখা যায় ব্যস্ততা। কাঠের গন্ধ আর হাতুড়ি-কুড়ালের শব্দে মুখর পুরো এলাকা।
কারিগরদের ভাষ্য মতে, শিমুল, কাঁঠাল, কড়ই, মেহগনি, কদম, আম, গোবরা জিবাÑএইসব কাঠ দিয়ে তৈরি হয় এসব নৌকা। একজন কারিগর প্রতিদিন গড়ে ১-২টি নৌকা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি নৌকা তৈরি করতে খরচ পড়ে ২হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। প্রতি পিস নৌকার জন্য শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় কাজের ধরন অনুযায়ী ৪শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত।
স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী সজল মোল্লা জানান, বছরের বাকি সময়গুলোতে ব্যবসা প্রায় বন্ধের মতো থাকে। কিন্তু বর্ষার আগমনের আগে থেকেই শুরু হয় ব্যস্ততা। বর্তমানে তার কারখানায় প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি নৌকা তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সপ্তাহের হাটের দিন শনিবার ও মঙ্গলবার। এই দুইদিন হাটে ভিড় করেন দূর-দূরান্ত থেকে আগত ক্রেতারা।
আরও পড়ুনতিনি আরও জানান, চাঁচকৈড় থেকে নৌকা কিনতে আসেন নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার বিস্তীর্ণ চলনবিল এলাকার মানুষ। বিলশা, কুন্দইল, রুহাই, তালম, সিংড়া, হরদমা, সাবগাড়ী, বিলদহরসহ অনেক অঞ্চল থেকেই আসে ক্রেতারা। কারখানা থেকে প্রতিদিন ৮-১০টি নৌকা বিক্রি হচ্ছে।
চলনবিলের জেলে আমজাদ হোসেন জানান, বর্ষার পানি এখনও না এলেও আসবে যে কোনো সময়। তাই আমরা পুরনো নৌকা মেরামত করছি, কেউ কেউ নতুন কিনছি। এই নৌকা দিয়েই পুরো বর্ষা কাটাতে হয়Ñমাছ ধরা, যাতায়াত, সবকিছু।
চাঁচকৈড় হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য রানা আব্দুল্লাহ বলেন, চলনবিলের বুকে বর্ষা যতই দেরিতে আসুক, বিলপাড়ের মানুষ থেমে নেই। তাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠা কাঠের নৌকা বর্ষার প্রথম বৃষ্টির আগেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে কারিগরদের হাতে ভরসা, জীবিকা আর টিকে থাকার প্রতীক হয়ে। হাট কমিটির পক্ষ থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাজনা আদায় করায় দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছে সপ্তাহের দুই হাট বাড়ে।
মন্তব্য করুন