ভিডিও রবিবার, ০১ জুন ২০২৫

বগুড়ার কাহালুতে গড়ে তুলেছেন ‘সুখের খামার’

রাজধানীর আয়েশী জীবন ছেড়ে গ্রামীন কৃষির জীবন বেছে নিয়েছেন জোবায়ের

রাজধানীর আয়েশী জীবন ছেড়ে গ্রামীন কৃষির জীবন বেছে নিয়েছেন জোবায়ের। ছবি : দৈনিক করতোয়া

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর আয়েসী জীবন ছেড়ে গ্রামীন কৃষি কাজ বেছে নিয়েছেন জোবায়ের ইসলাম রুবেল। গড়ে তুলেছেন ‘সুখের খামার’ ও ‘সুখের খামার গেস্ট হাউস’। স্বপ্ন দেখছেন ‘সুখের এগ্রো ভিলেজ’ তৈরির। কঠোর পরিশ্রম আর আত্ম বিশ্বাসের জোড়ে রুবেল শুধু একাই নন, তার পরিচিত ও কাছের মানুষদেরও কৃষি উদ্যোক্তা হতে সহযোগিতা করছেন।

রুবেলের জন্ম সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পূর্ব লক্ষ্মীকোলা গ্রামে। লেখাপড়া এবং পেশা সবমিলে ঢাকায় বেশ সুখেই জীবন কাটছিলো চল্লিশ বছর বয়সী জোবায়ের। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল দেশের কৃষিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, পরিবারের জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা এবং এক টেকসই কৃষিব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা।

তাই ঢাকার আয়েশী জীবন ছেড়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে গ্রামে ফিরে এসে শুরু করেন এক নতুন জীবন। বর্তমানে তিনি শ্বশুরবাড়ি বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল দক্ষিণ পাড়া গ্রামে বসবাস করছেন। আর সেখানেই গড়ে তুলেছেন ‘সুখের খামার’।

সিরাজগঞ্জ থেকে এসএসসি ও এইচএইচসি পাস করার পর ২০০৪ সালে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় সরকারি তিতুমীর কলেজে ‘মার্কেটিং’ বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন জোবায়ের ইসলাম। মার্কেটিং এ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পড়ালেখা শেষে শুরু করেন জনসংযোগ ব্যবসা। ওই সময়ই জোবায়েরের মাথায় আসে গ্রামে ফিরে এসে খামার ও নিরাপদ খাদ্য তৈরি করার। ২০১৬ সালে প্রথমে তিনটি গরু কিনে কাহালুতে একজনের কাছে বর্গা দেন। কিন্তু তিনি এতে লাভ করতে পারেননি।

এরপর ২০১৭ সালে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে কাহালুতে এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে এক আত্মীয়ের তত্ত্বাবধানে দেন। এক বছরে ওই জমি থেকে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা লাভ করেন। এরপর তার আত্ম বিশ্বাস বেড়ে যায়। ২০১৮ সালে আবারও তিনটি গরু কিনে এক খামারিকে বর্গা দিয়ে কয়েক মাসের ব্যবধানে বেশ ভালো অর্থ লাভ করেন। এ সবই তিনি ঢাকায় থেকে করতেন। ২০১৮ সালে জোবায়ের ও তাসদীখ হাবীব নামে তার এক বন্ধু জনসংযোগ ব্যবসার পাশাপাশি অনলাইনে অর্গানিক ফুডের ব্যবসা শুরু করেন।

‘আস্থার বাজার’ নামে অনলাইনে একটি পেইজ খুলে এর মাধ্যমে অর্গানিক শাক, সবজি, নদীর মাছ, ছাগলের মাংসসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করেন। ছয় মাস পর অর্গানিক খাদ্যের চাহিদা এতটাই বেড়ে যাওয়ায় পণ্য সরবরাহ করতে তারা হিমশিম খেয়ে যান। ফলে পণ্যের অভাবে ওই ব্যবসা বন্ধ করে দেন। ২০২০ সালে শুরু হয় করোনা। তখন জোবায়েরের মাথায় আসে গ্রামে ফিরে এসে কৃষির মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যের ব্যবসা করার। স্ত্রী আফসানা মিনাকে বুঝিয়ে বলতেই তিনি রাজি হয়ে যান।

‘হ্যাপি ফার্মিং’ স্লোগান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি বগুড়ার কাহালুর বাগইল গ্রামে খামার শুরু করলেন জোবায়ের। যেহেতু এই এলাকার জমি ও আবহাওয়া কৃষি কাজের জন্য খুবই উপযোগী তাই তিনি এই এলাকাকেই বেছে নেন।

কাহালুতে এসে আবারো তিনটি গরু কিনে এবার নিজেই লালন-পালনের মাধ্যমে শুরু করেন বাণিজ্যিক খামার। সে সময় তিনি বুঝতে পারেন গরু লালন-পালনের চেয়ে গরু-কেনা এবং বিক্রি করাই সবচে বেশি চ্যালেঞ্জিং। এরপর স্থানীয় এক গরুর দালালের সহযোগিতায় গরু কেনাবেচা শুরু করেন। একটি লভ্যাংশ ওই দালালকে দেন।

আরও পড়ুন

গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকেদের কাছে থেকে গরু কিনে তার খামারে এনে কিছুদিন লালন-পালন করে সেগুলো বিক্রি করতেন। তখনো পুরোপুরি ঢাকা ছাড়েননি তিনি। আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। এরই মধ্যে তার বন্ধ’ তাসদীখ হাবীবকে গ্রামে যৌথভাবে কৃষি ব্যবসার কথা জানালে তিনি রাজি হয়ে যান। ২০২৩ সালে পরিবার নিয়ে ঢাকা ছাড়লেন। গ্রামে ফিরে নিজেই হাল ধরলেন সবকিছুর। গড়ে তুললেন ‘সুখের খামার’।

ঢাকায় যখন অর্গানিক পণ্যের ব্যবসা করতেন তখন বেশ কিছু শিক্ষিত ও দক্ষ মানুষের তার খদ্দেরও ছিলেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ালেন, তাদের  বোঝালেন গ্রামে বিনিয়োগ গ্রামে তাদের অংশীদারিত্ব গড়ে উঠবে। জোবায়েরের কথায় তারা রাজি হয়ে গেলেন। চলে এলেন সুখের খামারের হাল ধরতে। বাড়তে থাকলো বিনিয়ো, বড় হলো তার খামার।

বর্তমানে তার খামারের মোট ৭০ জন বিনিয়োগকারী। বিনিয়োগকারীরা গরু কেনার জন্য একটি অর্থ দিয়ে থাকেন। সেটি একটি একটি করে গ্রুপে ভাগ করে থাকেন। গরু কিনে মোটাতাজা করার পর বিক্রি করে যে অর্থ লাভ হয় তার একটি অংশ তিনি তার খামারের জন্য রাখেন বাকি অংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সমভাবে ভাগ করে দেন। বিনিযোগকারীরা যেন গ্রামে এসে থাকতে পারেন সে কারণে তাদের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘সুখের খামার গেস্ট হাউস’।

মাটির তৈরি বানানো ওই গেস্ট হাউসে একসঙ্গে ১২জন মানুষ থাকতে পারেন। জোবায়ের ভবিষ্যতে ‘সুখের এগ্রো ভিলেজ’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করতে চান। ৩০ বিঘা জমির উপর ওই প্রকল্প করবেন। ওই প্রকল্পে তিনটি বিষয়ে জোবায়ের কাজ করবেন।  প্রথমত ‘সমন্বিত কৃষি খামার’। ওই খামারে একই সঙ্গে তিনি গরু, ছালল, ভেড়া, দুম্বা, হাঁস-মুরগি, মাছ, সবজি ও ফল চাষবাদ করবেন। সবকিছুই হবে অর্গানিক পদ্ধতিতে। এছাড়া ওই ভিলেজে থাকবে ‘এগ্রো ট্যুরিজম’ নামে একটি কটেজ।

ওই কটেজের জন্য ৫০টি মাটির ঘর নিমার্ণ করা হবে। এছাড়া ‘সুখের খামার ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন করা হবে। ওই ফাউন্ডেশন থেকে বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজ করা হবে। জোবায়ের বলেন ‘সুখের এগ্রো ভিলেজ’ হবে একটি অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প। ওই প্রকল্পের জন্য ২ হাজার শেয়ার বিক্রি করা হবে। একেটি শেয়ারের মূল্য ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

প্রত্যেক শেলারহোল্ডার ব্যাবসার লভ্যাংশের পাশাপাশি জমির মালিকানাও পাবেন। ৪ মে পর্যন্ত ওই প্রকল্পের প্রায় ৩৭টি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে প্রকল্পটি পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে তিনি মনে করেন। জোবায়ের ইসলাম জানান, তারা শুধু সুখের খামারেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ভবিষ্যতে একটি টেকসই কৃষি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে চান, যেখানে গ্রামীণ জীবনের পাশাপাশি আধুনিকতারও সংমিশ্রণ থাকবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাপান সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

জয়পুুরহাটের বাগজানায় দুই হাজার পিস ইঞ্জেকশনসহ আটক ১

এনসিপি যদি চায় ডিক্লেয়ার দিয়ে আসুক, জাতীয় পার্টি প্রস্তুত - জাপা নেতা মোস্তফা

বগুড়ার সোনাতলায় বর্ষালি মরিচ চাষে ঝুঁকেছেন কৃষক

ভোর রাতে কোরবানির তিনটি গরু চুরি

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এডহক কমিটি গঠন