ভিডিও শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস আজ

বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস আজ, ছবি: সংগৃহীত।

আজ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) ঘোষিত বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস। বিশ্বজুড়ে উদযাপিত এই দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন, প্রবেশাধিকার, নীতিমালা এবং সার্বজনীন সুবিধা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। আধুনিক সমাজে প্রযুক্তির বিশাল ভূমিকা এবং ডিজিটাল রূপান্তরের সুযোগ-সুবিধাকে সামনে রেখে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘ডিজিটাল রূপান্তরে লিঙ্গ সমতা’।ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, এই দিবসের সূচনা ১৮৬৫ সালের ১৭ মে, যখন প্যারিসে ইন্টারন্যাশনাল টেলিগ্রাফ কনভেনশনের মাধ্যমে গঠিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল টেলিগ্রাফ ইউনিয়ন’। পরবর্তীতে সেটিই রূপ নেয় বর্তমান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নে (আইটিইউ)। ১৯৬৯ সাল থেকে দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালন শুরু করে আইটিইউ, যা আজও বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নকে তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।

১৮৬৫ সালে আইটিইউ প্রতিষ্ঠার ১০৪ বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৯ সালে (ওঞট) এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ১ম ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস’ উদযাপিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে ‘বিশ্ব তথ্য সংঘ সম্মেলন’ এর ১ম পর্ব এবং ২০০৫ সালে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে সম্মেলনের ২য় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক তথ্য সমাজ গঠন করা।আর বিশ্ব তথ্য সংঘ দিবস সম্পর্কে ইতিহাস থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৭ মে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ‘বিশ্ব তথ্য সংঘ দিবস’ হিসেবে ১৭ মে দিনটি ঘোষণা করে। পরে ওই একই বছরের (২০০৬ সাল) নভেম্বরে তুরস্কের আনতালিয়ায় ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস’ ও ‘বিশ্ব তথ্য সংঘ দিবস’ একত্র করে ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস’ হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

দিবসটি (আইটিইউ)-এর ১৯৩টি সদস্য দেশ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত।বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ফাইভ-জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন এবং আইওটি (আইওটি) প্রযুক্তি শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থারই উন্নয়ন ঘটায়নি, বরং কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাণিজ্যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে। ফলে, এসব প্রযুক্তি শুধু জীবনযাত্রা সহজ করেনি, বরং বিশ্বের নানা বৈষম্য ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়ক হয়েছে।

তাছাড়া, বিশ্বের উন্নয়নমান দেশগুলোর জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবন এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনের মাধ্যমে সরকারি সেবাপ্রদান যেমন সহজ হচ্ছে, তেমনি দুর্বল জনগোষ্ঠীর কাছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক সেবা পৌঁছানোও সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, আইটিইউ ও ইউএনডিপি-র মতো সংস্থাগুলো বলছে, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী-পুরুষের সমতা, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা আরও বাস্তবসম্মত হয়ে উঠেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, প্রযুক্তি ব্যবহারে বৈষম্য এবং ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক গ্রামীণ বা দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনো উচ্চগতির ইন্টারনেট কিংবা স্মার্টফোন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত না করা গেলে ডিজিটাল অগ্রগতি সমাজে নতুন বৈষম্য তৈরি করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আইটিইউর জেন্ডার ও যুব বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা সিলভিয়া পোল বলেন, যখন সবাই ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন লাভ করে, তখন সমগ্র সম্প্রদায় উপকৃত হয়। নারীরা যদি প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা, ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও সেবাগ্রহণে সম্পৃক্ত হতে পারে, তবে তা সমাজ ও অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ন ঘটায়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ২.৬ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটের বাইরে রয়েছে, যার একটি বড় অংশ নারী ও কিশোরী। অনলাইন নিরাপত্তা, ডিজিটাল দক্ষতা ও ডিভাইসের মূল্যগত বাধার কারণে এখনও নারীরা অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছেন।

আরও পড়ুন

আইটিইউর ‘ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগারস ২০২৪’ অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৭০ শতাংশ পুরুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যেখানে নারীর সংখ্যা ৬৫ শতাংশ। এর মানে ১৮৯ মিলিয়ন পুরুষ বেশি অনলাইনে রয়েছেন নারীদের তুলনায়। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এই বৈষম্য আরও প্রকট—সেখানে মাত্র ২৯ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যেখানে পুরুষদের হার ৪১ শতাংশ। 

অন্যদিকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। গত এক দশকে দেশটি ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের অধীনে মোবাইল ইন্টারনেট, সাইবার নিরাপত্তা, ওটিটি সেবা, ডিজিটাল পেমেন্ট, এবং স্টার্টআপ সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে এখনো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি রয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

সেজন্য দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশেও নানা আয়োজন করা হয়েছে। দিবসের মূল অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়ে। সেখানে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনসহ দিবসটি সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে টেলিযোগাযোগ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকার, রেগুলেটর, উদ্যোক্তা, একাডেমিয়া এবং বিশেষজ্ঞ-এর সমন্বয়ে সেমিনার আয়োজন করা হবে।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে ডাক অধিদপ্তর এর আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা ডাক টিকিট অবমুক্ত করবেন। এছাড়া, টেলিযোগাযোগ খাতের উদ্যোক্তা ও লাইসেন্সিদের সমন্বয়ে বিটিআরসির প্রাঙ্গণে মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি টিমে ৪ জন করে মোট ৩৫টি টিম এতে অংশ নেবে। একইসাথে দিবসটি ঘিরে টেলিযোগাযোগ খাতে দেশ ও বিদেশে বিশেষ অবদানের জন্য যোগ্য ব্যক্তি-দলকে সম্মাননা দেওয়া হবে। এছাড়া, জুলাই আন্দোলনে আহত বীরদের বিশেষ ডিভাইস সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশ সচিবালয় (ভিতর ও বাহিরে), প্রেসক্লাব, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কার্যালয়, বিজয় সরণি থেকে সামরিক জাদুঘর ও আগারগাঁও (বিটিআরসি কার্যালয় এর প্রবেশ পথ) পরিবেশ বান্ধব ব্যানার এর মাধ্যমে সজ্জিত করা হবে। দিবসের প্রতিপাদ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন টেলিভিশনে টকশো আয়োজন, জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনসমূহে ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং বিসিএস (টেলিকম) সমিতি কর্তৃক স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিমানবন্দরে দু’দিন আটকা, অবশেষে দলের সঙ্গে যোগ দিলেন রিশাদ-রানা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যুবককে হত্যার দায়ে স্ত্রী আটক

গাজীপুরে পানি পান করে পেটের পীড়ায় অর্ধ শতাধিক শ্রমিক, কারখানা বন্ধ 

হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি মমতাজ 

হত্যাচেষ্টা মামলায় স্ত্রীসহ মিল্টন সমাদ্দার কারাগারে

১৭ বছর পর কান’র লাল গালিচায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলি