তরুণদের অংশগ্রহণে আগে গণপরিষদ নির্বাচন, তারপরে জাতীয় নির্বাচন : ফরহাদ মজহার

স্টাফ রিপোর্টার : দার্শনিক কবি ফরহাদ মজহার আজ শুক্রবার (২ মে) বগুড়ায় মতবিনিময় কালে বলেছেন, এই সরকার জনগনের রক্তের বিনিময়ে, নির্যাতিত জনগনের জীবন দিয়ে নির্বাচিত সরকার। যে গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল তা কোন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে গণঅভ্যুত্থান হয়নি, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে জনগণের ব্যানারে। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছিল।
কি অভিপ্রায়ে গণঅভ্যুত্থান হলো সে বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য তৃনমূল পর্যায়ে এ অন্তবর্তীকালিন সরকারকে যেতে হবে। জনগনের কথা শুনে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢাকায় বসে সংস্কার কমিশন গঠন করে সিদ্ধান্ত নিলে তা জনগণের অভিপ্রায় পূরুণ হবেনা।
বগুড়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় কালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রহিম বগরা, নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিক, সাংবাদিক রেজাউল হাসান রানু, সবুর শাহ লোটাস, গনেশ দাস প্রমুখ।
মত বিনিময় সভায় ফরহাদ মজহার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মানবিক করিডর দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রক্সি ওয়ারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ’আমি কোনভাবেই চাইবো না করিডোর দেয়া হোক। করিডোর কখনও আমাদের দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেনা। এসব কারনে বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণকে সেনাবাহিনীর সদস্য করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। সেনাবাহিনীকে জাতীয় সেনাবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য নতুন সংবিধান না, নতুন গঠনতন্ত্রের প্রয়োজন। গঠনতন্ত্র মানে কিন্তু আইন না, তবে সংবিধান মানে হচ্ছে আইন। আর আমরা কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসক না। ইংরেজরা আইন প্রণয়ন করে আর জনগণ গঠনতন্ত্র করে। আর এ পার্থক্যটাই মনে রাখতে হবে। তার মানে আপনি যখনই সংবিধান বলবেন আপনি ঔপনিবেশিক একজন শাসক। তখন আপনি লুটেরা মাফিয়াতন্ত্রের ন্যায় একজন শাসক।
আপনি একটা আইন দিয়ে গরিবদের শাসন করবেন। তাই আগে গঠনতন্ত্র তৈরি করে গণপরিষদ নির্বাচন করা প্রয়োজন,তারপর জাতীয় নির্বাচন। গঠনতন্ত্র মানে জনগণ নিজেরাই অংশগ্রহণ করবে। তারা পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে বাস করবে এটা তারা তৈরি করবে। সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে, তরুণদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে আবার যারা ক্ষমতায় আসবে তারা আগের সরকারের মতোই লুটপাট করবে। নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। এ জন্য সাধারণ মানুষ ও তরুণদের অংশগ্রহনে আগে গণপরিষদ নির্বাচন, তারপরে জাতীয় নির্বাচন।
তিনি বলেন,৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এক. কোন মানুষের অধিকার হরণ করা যাবেনা মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে,দুই. প্রাকৃতিক কোন কিছু দখল করা যাবেনা,তিন মানুষের জীবন জীবিকা বিপন্ন হয় এমন কোন আইন করা যাবেনা।তিনি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি গণতান্ত্রিক অধিকার, নতুন দল গঠনকে তিনি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বলে মত প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুনএদিকে, পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, কবি, কলামিস্ট ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার গত বুধবার রাতে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা কারিগরের আয়োজনে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চোতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্খা: রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখনও ক্ষমতায় রয়ে গেছে সংবিধানের মাধ্যমে। তাই ৭২’র সংবিধানকে বাতিল করে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে।
একই সাথে সেই নতুন গঠনতন্ত্র হবে সাম্য মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার দাখিল করার জন্য। সাম্য, মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায় বিচার কায়েম করা মানে হলো ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ২৪’র আন্দোলনের এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হলাম। তবে অল্প একটু বাদ পড়েছে। পূর্ণ বিজয় হয়নি। কারণ আমরা এই বিজয়টাকে ঢুকিয়ে ফেলেছি ফ্যাসিস্ট সংবিধানে। আমরা আবারো ঢুকিয়ে পড়লাম পুরনো সংবিধানে।
আমরা একটা নতুন সরকার গঠন করলাম পুরনো ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধিনে। ফলে আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায়। আমরা আওয়ামী লীগকে উৎখান করতে পারিনি। আওয়ামী লীগ এখনো সেই ৭২ এর সংবিধানে রয়ে গেছে। তিনি গত বুধবার রাতে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা কারিগরের আয়োজনে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চোতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্খা: রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
পরে একক বক্তৃতা শেষে উপস্থিত দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার। অনুষ্ঠানে সরকার হায়দারের সঞ্চালনায় লেখক গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পরিবেশ প্রেমী ও সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। শেষে প্রাণ, প্রকৃতি বিষয়ক ও যুদ্ধ বিরোধী গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করে নাট্যদল ভূমিজ ও কারিগর।
মন্তব্য করুন