ভিডিও বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

বগুড়া ও রংপুরে আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে কৃষক

বগুড়া ও রংপুরে আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে কৃষক। ছবি : দৈনিক করতোয়া

স্টাফ রিপোর্টার : বাম্পার ফলন হওয়া আলু সংরক্ষণ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বগুড়া ও রংপুরের কৃষক।  হিমাগারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কৃষকের বাড়িতেই আলু পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। যার কারণে আলু চাষ করে লোকসান গুণতে হচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষকদেরকে।

কৃষি বিভাগ বলছে, এবছর অধিক সংখ্যক জমিতে আলু চাষ করেছেন বগুড়ার কৃষক। পাশাপাশি ফলনও হয়েছে বাম্পার। এত বেশী পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষককে। তবে হিমাগারের বাহিরেও কৃষি বিভাগীয় প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষকের দুই হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করতে পেরেছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বগুড়া জেলায় ৬০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে  আলু চাষ করা হয়। এই পরিমাণ জমি  থেকে হেক্টর প্রতি ২৩ টন হিসেবে আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর এই জেলায় ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল।ফলন হয়েছিল হেক্টর প্রতি ২১ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগের মতে বগুড়া জেলার সাড়ে ৩৭ লক্ষ জনসংখ্যার জন্য বছরে আলুর চাহিদা রযেছে ৩ লাখ মেট্রিক টন। আর জেলার ৪২ টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা যায়  ৪ লাখ মেট্রিক টন। শিবগঞ্জ উপজেলার অনন্তবালা গ্রামের কৃষক সেলিম উদ্দিন বলেন,দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করে এবার তার লোকসান হয়েছে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা।

ফলন ভাল হওয়ায় দুই বিঘা জমিতে ৮৫ মণ আলু পেয়েছেন। ভাল দাম না পাওয়ায়  এখনও তার বাড়িতে ৫০ মণ আলু রয়েছে। সংরক্ষণের অভাবে সেই আলুতে পচন ধরতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, গ্রামের প্রতিটি কৃষকের ঘরে আলু অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে।

আলুর চাহিদা এতটাই কম যে, গরিব মানুষকে বিনামূল্যে দিলেও তা নিচ্ছে না। বগুড়া সদরের ঘোলাগাড়ি গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, মৌসুমের শুরুতে দাম ভাল পাওয়া গেলেও এখন আলু বিক্রি করে লেকসান হচ্ছে। তিনি বলেন সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাকড়ি জাতের আলু উৎপাদন হয়েছে ২০০ মণ। কিন্তু ভাল দামে বিক্রি করতে না পারায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লেকসান গুণতে হচ্ছে।

বগুড়ার মহাস্থানহাট ঘুরে দেখা গেছে,পাকড়ি আলু ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, এবং সাদা স্টিক আলু ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতা হক বলেন, বগুড়ায় এই প্রথমবারের মত কৃষকের বসতবাড়িতে প্রাকৃতিক উপায়ে আলু সংরক্ষণের জন্য ৬৭ টি অহিমায়িত ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

এই ঘর গুলোতে বিনা খরচে দুই হাজার মেট্রিকটন আলু চার মাস সংরক্ষণ করা যাবে। কৃষক এর সুফল পেলে আগামীতে নিজ নিজ বাড়িতে অহিমায়িত ঘর তৈরি করলে আলু,পিয়াজসহ গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন সবজি সংরক্ষণ করতে পারবে।

আরও পড়ুন

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মোঃ সামছুদ্দিন ফিরোজ বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে  আলুর ফলন বেশি হয়েছে। এছাড়াও আলু চাষও হয়েছে অনেক বেশি জমিতে। যার ফলে বাজারে আলুর দাম তুলনামূলক কম। এত বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করতে কৃষকের পাশাপাশি কৃষি বিভাগও হিমশিম খাচ্ছে।

এদিকে আমাদের রংপুর প্রতিনিধি জানান, সংরক্ষণের অভাবে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছে রংপুরের কৃষকরা। জেলার পীরগাছা, মিঠাপুর, কাউনিয়া, গংগাচড়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ পীরগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলার হিমাগারগুলোতে আলেতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। যেসকল কৃষক আলু হিমাগারে জায়গার অভাবে রাখতে পারে নাই তাদের  কয়েক হাজার মেট্রিক টন আলু পচে নষ্ট হচ্ছে।

চলতি বছর রংপুর অঞ্চলে ১ লাখ ১ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন। অন্যদিকে জেলার হাট-বাজারগুলোতে আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ফলে আলু চাষ করে এবার চরম বিপাকে এই অঞ্চলের কৃষকরা। কৃষি বিভাগ আশার কথা শোনাতে না পারলেও জানিয়েছে রফতানির চেষ্টা চলছে।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বিরাহীম গ্রামের আলুচাষি হুমায়ন কবীর জানান, এবার তিন একর জমিতে আলুর চাষ করে ছিলেন। ফলও ভালো হয়েছে। হিমাগারে রাখতে না পেরে বাসায় রেখেছিলাম। কিন্তু আলু পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি করতে গেলে প্রতিকেজি আলুর দাম ৭ থেকে ৮ টাকার বেশি কেউ কিনতে চায় না। ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

সিটি কর্পোরেশন এলাকার খাসবাগ এলাকার বাসিন্দা রহতম শেখ জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও ৫ বিঘা জমিতে ২ লাখ টাকা খরচ করে আলু চাষ করেছেন। হিমাগারে জায়গা না পাওয়ায় ঘরেই সংরক্ষণ করছেন। একদিকে আলু পচে নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে ক্রেতারও অভাব। কেউ কিনতে চায় না। এবার পুরোটাই লোকসান।
কৃষক দুলাল মিয়া জানান, হিমাগারে আলু রাখতে না পেরে তিনি, গোয়াল ঘর, বাড়ির উঠান, পুকুরের পাড়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আলু স্তূপ করে রেখেছেন। এতে পচন ধরে আলু দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

কৃষকরা জানান, অর্থ খরচ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা আলু এখন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। ঘরে ঘরে আলু রয়েছে। সংরক্ষণ ও বিক্রি না করতে পারায় পচে যাচ্ছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, রফতানিকারকদের সাথে আলোচনা চলছে। বিদেশে আলু রফতানির চেষ্টা চলছে। কৃষকরা না বুঝে ফসল উৎপাদন করছে। যে কোন ফসল বুঝে শুনে উৎপাদন করা দরকার। এতে করে কৃষকরা লাভবান হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপি এ দেশের খেটে খাওয়া মাটি ও মানুষের দল - আহসানুল তৈয়ব জাকির

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চীনা রাষ্ট্রদূত বাগান পরিদর্শন করে আম আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন

রাজশাহী এলজিইডিতে একজনের কাজ করে অন্যজন, ব্যবস্থা নেবে দুদক

জাবি আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স: আ: হক কলেজের সাফল্য

বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থানে করতোয়া নদী থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ উদ্ধার

বগুড়ায় মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত স্কুল ছাত্র উদ্ধার : নারী গ্রেফতার