বিদেশি ফলের জায়গা নিচ্ছে দেশি ফল
বগুড়ায় চাহিদা বেড়েছে আতাফলের

শাওন রহমান : ‘আতা গাছে তোতা পাখি /ডালিম গাছে মৌ/ এত ডাকি তবু কথা/ কও না কেন বউ?’ ছড়ার ছন্দের সুমিষ্ট আতাফলের গাছ এক সময় বাড়ির পিছনে, উঠোনে বা জঙ্গলে দেখা যেতো। কিন্তু একসময়ের অতিপরিচিত দেশি ফলটি প্রায় বিলুপ্তির পথেই ছিল। তবে সাম্প্রতিক বাজারজুড়ে ব্যাপক নজরে পড়ছে ওষুধি গুণের এই ফল।
বিগত কয়েক বছর ধরে বগুড়ার ফুটপাতে, ফলের দোকানে কিংবা ফেরি করে বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে আতফলকে। তবে গত দু’তিন বছর ব্যাপক বেড়েছে এই ফলের চাহিদা ও বিক্রি। ফলের পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বিদেশি ফলের দাম বাড়ার কারণে দেশি ফলের বিক্রি বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ফলের মৌসুমে বগুড়ায় প্রতিদিন প্রায় এক হাজার কেজি পর্যন্ত আতাফল বিক্রি হয়ে থাকে।
খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে মূলত এই ফলগুলো বগুড়ায় আসে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি আতাফল খুচরা সর্বোচ্চ ৩শ’ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা যায়, যা বর্তমানে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সুস্বাদু ফল আতা হল ‘অ্যানোনা’ গোত্রের এক ধরনের যৌগিক ফল। এটি শরিফা, মেওয়া বা মাদার নামেও পরিচিত। আতার আদিবাস ভারত। বাংলাদেশ ও ভারতে এটি বসতবাড়ির আঙিনায় এবং বনে-জঙ্গলে জন্মে থাকে। তবে থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলে মার্চ থেকে থেকে জুন পর্যন্ত এ ফল পাওয়া যায়।
আতাফলের যেমন রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতা তেমনি রয়েছে অনেক রোগের সমাধান। স্বাদে বেশ মিষ্টি এই ফল অনেক মানুষের পছন্দের তালিকাও রয়েছে। কিন্তু মুখরোচক ফলটি শুধুমাত্র স্বাদের দিক থেকে নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। আতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। আতাফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকায় ত্বক, চুল এবং চোখের জন্য উপকারী। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, তারুণ্য ধরে রাখে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুনডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কমাতে এই ফল খেতে পারেন। আতাফলে যে আঁশ থাকে, তা শরীরে চিনির মাত্রা কমায়। আতাফলে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া এই ফলে ভিটামিন ‘বি সিক্স’ থাকে, যা হোমোসিসটিন নামের যে অ্যামাইনো অ্যাসিড যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, তা নিয়ন্ত্রণ করে।
আতাফলে প্রচুর কপার ও আঁশ থাকে, যা হজমে সহায়তা করে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শুকনো আতাফলের গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে খেলে ডায়ারিয়া প্রতিরোধ হয়। আতাফলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান ধ্বংস করে দেয়। আতাফলে ভিটামিন ‘বি সিক্স’ থাকে প্রচুর, যা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা ও অ্যাজমা রোধ করে।
সাম্প্রতিক আতাফলের বিক্রি ও চাহিদা সম্পর্কে বগুড়া ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আনাম তুষার বলেন, দেশি সুমিষ্ট আতাফল প্রায় বিলুপ্তির পথেই ছিল। গত কয়েক বছর আগেও ফলের দোকানগুলোতে এ ফলের দেখা মেলেনি। কারণ, দেশে এটির বাণিজ্যিক চাষাবাদ এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। তবে বিদেশি ফলের দাম বাড়ায় মানুষ দেশি ফলে ঝুঁকছেন।
যার ফলশ্রুতিতে সুস্বাদু এই ফলের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা ও ভালো দামের কারণে বগুড়ার পাইকারি বিক্রেতারা বিভিন্ন জেলা থেকে এই ফলের সরবরাহ বাড়িয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবার দেশি এই ফলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। বিদেশি দামি ফলের বিপরীতে দেশি আতাফল সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
মন্তব্য করুন