ভিডিও সোমবার, ১২ মে ২০২৫

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলাবাড়ী উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহে মুখ থুবড়ে পড়েছে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বলছেন কর্মকর্তা-কর্মচারির তীব্র সংকট পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকার কারণে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা। গ্রামীন জনগোষ্ঠীর দোড় গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশের ন্যায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ২টি ইউনিয়নে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সপ্তাহে ৬দিন এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, প্রসবপূর্ব সেবা, প্রসবকালীন সেবা, নবজাতকের পরিচর্যা, শিশুস্বাস্থ্য সেবা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা কার্যক্রমসহ ৪০ থেকে ৪২ প্রকারের ঔষধ বিনামুল্যে প্রদান করা হয়ে থাকে। 
সেবা প্রদানের জন্য প্রতিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৫টি পদে ১ জন উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ১জন  পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন আয়া এবং ১ জন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী কর্মরত থাকার কথা থাকলেও শুধুমাত্র আয়া পদে শতভাগ জনবল রয়েছে। বাঁকি ৪টি পদের মধ্যে ৫জন উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদের বিপরিতে রয়েছেন ৩ জন, পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নে ৯ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদের মধ্যে রয়েছে মাত্র ২ জন।

একই ভাবে ৫জন ফার্মাসিস্ট পদের বিপরিতে রয়েছে ২জন ও ৫জন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী পদের বিপরিতে রয়েছে ১জন । সেই সাথে প্রতিটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১জন  করে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও ১জন আয়ার পদ রয়েছে। শুধুমাত্র উপজেলার বেতদিঘি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শতভাগ জনবল থাকলেও কাজিহাল ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দুটি পদই শুন্য।

এ কারণে কেন্দ্রটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে সেবা গ্রহিতাদের কথা বিবেচনা করে সপ্তাহে একদিন অতিরিক্ত দায়ীত্ব হিসেবে একজন উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। জনবল সংকটের কারনে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে গ্রামীন পর্যায়ে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রম। অপরদিকে চার মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

কাজিহাল ইউনিয়নের বাসীন্দা মর্জিনা বেগম, আব্দুল করিম, বিউিিট আক্তার বলেন, আমরা গ্রামে বসবাস করি। চাইলেই চিকিৎসার জন্য  শহরে যেতে পারি না। বিপদে-আপদে ভরসা স্থানীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। জরুরি চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে হলেও অনেক সময় এবং অর্থ ব্যয়  হয়।

ইচ্ছা থাকলেও সবসময় যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই আমাদের এলাকায় যে স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাই অন্যতম ভরসা। কিন্তু জনবল না থাকার কারনে এখানকার কেন্দ্রটি সপ্তাহে একদিন খোলা হয়, এতে করে চরম সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। এ কারণে আমরা কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি।

আরও পড়ুন

উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নে ১০শয্যা বিশিষ্ট্য চিন্তামন মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রটি ২০২১ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হয়। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও নির্মাণের ৩ বছর পার হলেও কেবলমাত্র জনবলের অভাবে পুরোপুরি চালু হয়নি স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।

বেতদিঘি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পাপিয়া সুলতানা বলেন, আমি বেতদিঘি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দায়ীত্বপ্রাপ্ত হলেও চিন্তামন মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে অতিরিক্ত দায়ীত্ব পালন করছি। ১০জনের দায়িত্ব আমাকে একাই পালন করতে হচ্ছে। জনবল সংকটের কারনে সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই কেন্দ্রটি ২০২১ সালে চালু হলেও শুধুমাত্র জনবলের কারনে বন্ধ ছিল।

আলাদীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হাসান মুনতাসির বলেন, ৫ জনের স্থলে দুইজন এখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চরম হিমশিম খেতে হয়। কাজিহাল ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে জনবল শুন্যের করনে বন্ধ থাকায় সেখানেও সপ্তাহে একদিন আমাকে বসতে হয়। তিনি বলেন, ঔষধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ৪ মাস ধরে। জন্ম বিরতিকরন ইনঞ্জেকশন থাকলেও সিরিঞ্জ সরবরাহ নেই। এতে করে সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাসুনুল বান্না বলেন, বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারির সঙ্কট রয়েছে। পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নে ৯ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার মধ্যে মাত্র ২জন দিয়ে কার্যক্রম চলছে। অন্যন্য পদেও জনবল কম রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে জেলা মিটিংয়েও উপস্থাপন করা হয়েছে। নিয়োগ দেয়া হয় অধিদপ্তর থেকে।

এছাড়া দির্ঘদিন থেকে পদগুলোয় নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ঔষধ সরবরাহের বিষয়টি মন্ত্রনালয়ের সাময়িক জটিলতার কারনে বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্রামীন জনগনের স্বাস্থ্য সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আশা করছি ২-৩ মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে।

দিনাজপুর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এটিএম নাজমুল হুদা বলেন, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার পদটি হাইকোর্টে ( রিট) মামলা হওয়ার কারণে স্থগিত রয়েছে, নতুন করে আর এ পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। তবে অন্যান্য পদগুলিতে মন্ত্রণালয় থেকে সার্কুলার হলেই নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ওষুধ সরবরাহরের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে টেন্ডার জটিলতার কারণে সারাদেশেই এই সমস্যা রয়েছে। আশা করছি এপ্রিল অথবা মে মাসের দিকে সমস্যার সমাধান হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন মামলায় ৭ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী গ্রেফতার

কুষ্টিয়ায় ৪০টি দেশীয় শালিক পাখি উদ্ধার

পাবনার সুজানগরে ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল সংকট

আইভীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর

র‌্যাব পুনর্গঠনে কমিটি গঠন

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পুকুরে গোসলে নেমে কিশোরের মৃত্যু