ভিডিও মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

বগুড়ায় বাড়ছে অপমৃত্যু, ২ মাসেই ৮৩ জনের প্রাণহানি

বগুড়ায় বাড়ছে অপমৃত্যু, ২ মাসেই ৮৩ জনের প্রাণহানি। প্রতীকী ছবি

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় প্রতিদিনই অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। শুধু যে সড়ক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যা তা নয়, পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে, বিদ্যুতায়িত হয়ে, ভবনের ছাদ থেকে পড়াসহ নানাভাবে মানুষের অপমৃত্যু হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রূয়ারি এই দুই মাসেই বগুড়ায় ৮৩ জনের অপমৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে বগুড়ায় দিনে গড়ে একজনেরও বেশি মানুষের অপমৃত্যু হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলেন, এক একটি জীবনের সঙ্গে একেকটি স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে। একটি মৃত্যু সব কিছু শেষ করে দেয়। অনেকে জীবনের মূল্য না বুঝে আত্মহত্যা করে নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়। আবার অনেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও জীবন তার কাছ থেকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। বর্তমানে নিজ ঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, রাস্তা কোথাও মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই।

প্রতিদিনই মানুষ কোন না কোন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অনেকে আবার বিভিন্ন কারণে জীবনের প্রতি অনীহা এসে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এসব মৃত্যুই পুলিশের রেকর্ড খাতায় অপমৃত্যু হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। থানায় দায়ের করা হয় ইউডি (অস্বাভাবিক বা অপমৃত্যু) মামলা। বর্তমানে বগুড়ায় এমন অপমৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এমন একটি দিনও নেই।

প্রতিদিনই অপমৃত্যুর শিকার হচ্ছে সব বয়সী মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই রক্ত ঝরছে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধের। ট্রেনে কাটা পড়েও মানুষের অপমৃত্যু ঘটছে। এছাড়া বিষপানে,গলায় ফাঁস লাগিয়ে, চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে, ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে, শরীরে আগুন দিয়ে এবং নদীতে ঝাঁপ দিয়ে অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

আবার কোন কোন ঘটনায় খুন করে আত্মহত্যা কিংবা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হয়েছে বলে ঘাতক চক্র চালিয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের খুনের ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রহস্য উদ্ঘাটন হয় না। অপমৃত্যুর ঘটনা এভাবে বেড়ে যাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রে।

তবে বগুড়ায় অপমৃত্যু বাড়লেও অপমৃত্যু মামলার জোড়ালো তদন্ত হয় না। কোনো কোনো অপমৃত্যুর ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও জোরালো তদন্ত হয় না। অপরাধ, সমাজ ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি অপমৃত্যু ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এর নেপথ্য কারণ নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সতর্ক হলে কিছু অপমৃত্যু এড়ানো সম্ভব।

এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। গলায় ফাঁস দিয়ে কিংবা বিষপানে আত্মহত্যা,পানিতে ডুবে, মাটি চাপা পড়ে, পশুর আঘাতে, বজ্রপাতে, আগুনে পুড়ে, মেশিনারিজ চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায়, ট্রেনে কাটা পড়ে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, উঁচু গাছ বা ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু অথবা সন্দেহজনক মৃত্যু হলে থানায় অপমৃত্যু মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে তেমন কোনো তদন্ত হয় না।

আরও পড়ুন

এসব অপমৃত্যুর নেপথ্য কারণও জানা যায় না। এ সুযোগে পরিকল্পিতভাবে কাউকে মেরে তা অপমৃত্যু হিসেবে চালিয়ে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যপক মো: আবু সায়েম করতোয়া’কে বলেন, বগুড়ায় যেসব অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে তার একটি বড় অংশই আত্মহত্যাজনিত কারণে হয়ে থাকে।  সেইসাথে আত্মহত্যা যারা করে  তার বেশিরভাগ শিকার নারী। যৌতুক,স্বামীর পরকীয়াসহ দাম্পত্য কলহের জের ধরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অনেক নারী।

জীবনের প্রতি অনীহা থেকে প্রতিদিন কেউ না কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। তিনি বলেন, বিষণ্নতা, অস্থিরতা, মাদকাসক্তি, পারিবারিক অশান্তি, যৌতুকসহ মানসিক রোগের কারণেই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের প্রবণতা কারও মধ্যে দেখা দিলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব মনোরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি বলেন, নারী  ও টিনেজারদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তাদের এই সমস্যা থেকে বের করে আনতে হবে। কাউন্সিলিং করতে হবে। তাহলে আত্মহত্যার প্রবনতা কমে আসবে।

বিশ্লেষকরা বলেন, প্রতিটি অপমৃত্যুর ঘটনারও যথাযথ তদন্ত করা উচিত। এছাড়া কোনো অপমৃত্যুর ঘটনা রহস্যজনক মনে হলে তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা না করে তদন্ত শুরু করা উচিত। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন যে সময়ের মধ্যে আসবে সেই সময়ে মামলার গুরুত্ব অনেকটাই কমে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে আলামত। শুধু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের দিকে না তাকিয়ে অপমৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চালিয়ে যাওয়া উচিত। অপমৃত্যু মামলা নেয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে।

এরপর আর কারও কোনো গরজ থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে করা অপমৃত্যু মামলা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে থাকে পুলিশ। এতে অনেক সময় প্রকৃত ঘটনা আড়াল হয়ে যায়।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার করতোয়া’কে বলেন, আত্মহত্যা কিংবা সন্দেহজনক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৭৪ ধারায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা দায়ের করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে আদালতে পাঠায়। আদালত সবকিছু দেখে যথাযথ নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন অপমৃত্যুর মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কোনো সুযোগ নেই। অপমৃত্যু মামলাকে নিয়মিত মামলার মতো গুরুত্বসহ তদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলা সচল করা হয়। নেতিবাচক কিছু না পেলে মামলাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হলেও পরে তদন্তে হত্যার প্রমাণ বেরিয়ে আসে। ঘাতকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশে ছোট পোশাক পরি না, বিদেশে গিয়ে পরি : মিম

ইসরায়েলি নৃশংসতা লিখে পুলিৎজার পেলেন ফিলিস্তিনি কবি

এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সাইবার আইন কার্যকর হবে : আইন উপদেষ্টা

বেবিবাম্প নিয়েই মেট গালায় হাঁটলেন কিয়ারা

দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন খালেদা জিয়া

একদিনে চার দেশে বিমান হামলা ইসরায়েলের