দিনাজপুরের বিরলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে তৈরি কলের সেমাই

বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বিরলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে তৈরি কলের সেমাই বা সেমাই তৈরির কল। অথচ একসময় সেমাই বলতে মানুষের স্বাদ ও সাধ্যের মধ্যে ছিল এই হাতে তৈরি সেমাই। বিভিন্ন উৎসব ও আতিথিয়তার চাহিদা মেটাতো এই সেমাই। বিশেষ করে সেমাই ঈদ বা রমজান মাসকে সামনে রেখে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি পাড়া মহল্লার বাড়িগুলোতে পড়ে যেত সেমাই তৈরির ধুম। ঘটা করে চলতো সেমাই তৈরির নানা আয়োজন।
এই সেমাই তৈরির জন্য উপকরণ হিসেবে দরকার হয় আটা। আটা সাধারণত চাল বা গমের তৈরি হয়ে থাকে। এই আটা প্রথমে গরম পানিতে সিদ্ধ করে নিয়ে রুটি খামিরের মত করে নিতে হয়। এরপর সেমাই তৈরির কলে একজন খামিরের অংশ ঠেসে দেবে আর একজন কলের হাতল ঘুরাবে। এভাবেই তৈরি হবে সেমাই। কলের চালনি বা ছাঁচ পরিবর্তন করে তৈরি করা যায় চিকন, মাঝারি ও মোটা সেমাই। সেমাই তৈরি হয়ে গেলে তা রোদে শুকিয়ে প্রয়োজন অনুসারে রান্না করা হয়ে থাকে।
তবে এভাবে সেমাই তৈরির ধুম আগের মত এখন আর চোখে পাড়ে না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই সেমাই তৈরির পুরনো পদ্ধতি। বর্তমান সময়ে সব কিছু সহজলভ্য হবার কারণে হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকমের বাহারি সেমাই। তারপরও শখের বসে প্রথাগত এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কেউ কেউ।
দীর্ঘদিন পর উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের দক্ষিণ রঘুনাথপুর গ্রামে সম্প্রতি দেখা মেলে এই হাতে তৈরির কাজ। আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শখের বসে তৈরি করা হচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় এই হাতে তৈরি সেমাই।
এসময় সেমাই তৈরির কাজের ফাঁকে কথা হয় গৃহিনী সালেহা বেগমের সাথে।
তিনি জানান, বর্তমান যুগে বাজারে বাহারী অনেক সেমাই পাওয়া যায়। তবে এই হাতে তৈরি সেমাইয়ের স্বাদ একেবারেই ভিন্ন। এর সাথে অন্যটার তুলনা হয় না। তাই পুরোনো স্বাদ পেতে আসছে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা চাল গুঁড়ো করে সেই আটা দিয়ে সেমাই তৈরি করছি।
শখের বসে এ কাজে নিয়োজিত আরমান মুস্তাকিম ও মাহাবুবা খাতুন জানান, আমরা আমাদের দাদির কাছ থেকে এ সেমাই তৈরির পদ্ধতি শিখেছি। এখন আমরাই এই সেমাই তৈরি করতে পারি। এই সেমাই খেতে দারুণ সুস্বাদু। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম জানুক এব এই সেমাই তৈরির পদ্ধতিটি যুগে যুগে বেঁচে থাকুক।
মন্তব্য করুন