মামলা করায় বাদিকে হুমকি
লালমনিরহাটে ভুয়া সনদ ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে চাকরি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভুয়া সনদ ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে দপ্তরি কাম প্রহরী পদে কর্মরত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে মাহবুবার রহমান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বছরের পর বছর এ পদে বহাল থেকে ওই ব্যক্তি সরকারি বেতন ভাতাও তুলছেন নিয়মিত। জালিয়াতি করে সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণের এই ঘটনাটি ঘটছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মৃত্তিঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উক্ত পদে লোক নিয়োগের জন্য গত ১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে মোতাবেক মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় ৯জন অংশ নেন এবং ওই পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী হিসেবে প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর নিয়োগ কমিটি এলাকার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হরদত্ত গ্রামের তসলিম উদ্দিনের ছেলে মোঃ মাহবুবার রহমানকে নিয়োগ প্রদান করে।
এরপর মাহবুবার রহমানের ভুয়া সনদ ও নয় ছয় করে তৈরি করা জাতীয় পরিচয় পত্রের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে। তাতে ধরা পড়ে মাহবুবার রহমানের চাকরির বয়স অনেক আগেই শেষ হলেও নিয়োগ কমিটি মোটা অংকের অর্থের লেন দেনের সুবিধা নিয়ে তাকে ওই পদে নিয়োগ দেয়।
পরে এনিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ২য় স্থান অধিকারী একই গ্রামের সুমন চন্দ্র রায়ের ছেলে সুদান চন্দ্র রায় শিক্ষা বিভাগসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ সম্পর্কিত অভিযোগ দাখিল করলে এটি তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ৩ সদস্য’র একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির তদন্তে সুদান চন্দ্র রায়ের অভিযোগের সত্যতার বিষয়টি উঠে আসে।
তবে এর আগে সুদান চন্দ্র রায় অভিযোগ করেও যখন কোন সুরাহা পাচ্ছিলেন না, তখন তিনি এবিষয়ে আদালতের দারস্থ হন। হাইকোর্টে সুদান চন্দ্র রায় অভিযোগের বিষয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারক তারেক উল হাকিম ও সোহরাওয়ার্দী সমন্বয়ের দ্বৈত বেঞ্চ ৪ সপ্তাহের রুল জারি করেন। এই রুলে বিজ্ঞ বিচারকদ্বয় কেন উক্ত নিয়োগ অবৈধ নয় তা জানতে চান এবং মেধা তালিকায় ২য় জনকে ওই পদে যোগদান করতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা জারি করেন।
আরও পড়ুনএই রুল জারির ৫বছর অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি কর্তৃপক্ষ রুলের জবাব না দিয়ে আদালত অবমাননা করছেন বলে অভিযোগ রিট দায়েরকারী সুদান চন্দ্র রায়ের। তার দাবি একারণেই আমার দায়েরকৃত মোকর্দ্দমাটি ঝুলে আছে এবং আমি হুমকির মুখে জীবন যাপন করছি।
তবে জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে আমরা অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে রির্পোট আদালতে পাঠিয়েছি। তবে তদন্ত প্রতিবেদন বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, রাজনৈতিক প্রভাবেই ছিল এর একমাত্র কারণ।
এদিকে আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এনিয়ে কথা হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লিটন দাস বলেন, আমার এই কর্মস্থলে যোদানের বয়স মাত্র ১০দিন,তাই এসম্পর্কে আমি কিছু জানি না। খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। অন্যদিকে কথা হলে মৃত্তিঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নুরজাহান বেগম বলেন, আমার এখানে বলার বা করার কিছুই ছিল না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমি ঠিক সেভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করেছি, বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
মন্তব্য করুন