কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নদ-নদী শুকিয়ে বালুচর চলছে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতে শুরু হয় ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল। উপজেলায় ৬টি নদী ব্রহ্মপুত্র, হলহলিয়া, সোনাভরি, জিঞ্জিরাম, কালাপানি ও ধর্ণি। বিশেষ করে পাহাড়ি ঢলে বেড়ে যায় ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা হলহলিয়া নদীর খোরস্রোত।
এতে চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার পূর্বাংশে সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের কাতলামারীর মুখ বন্ধের উপক্রম হওয়ায় হলহলিয়া নদের পানি প্রবাহ কমে গেছে। পানিতে স্রোত না থাকায় এসব নদের বুকে জেগেছে বালুচর। এসব চরে শুকিয়ে যাওয়া বালুচরে এখন কৃষকেরা বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন।
রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার চর খেদাইমারী, বলদমারা, পালেরচর, ফলুয়ারচর, ধনারচর, চরের গ্রাম, কাটিয়ামারীর চর, ডাটিয়ারচর, চরসাজাই, চরবদরপুর, খারুভান্স চর, ভেলামারীরচর এবং চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার পূর্বাংশের সাহেবের আলগা, খেরুয়ারচর, অষ্টিমির চর, নয়ারহাট ও চরগেন্দার আলগা দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলো নাব্যতায় এখন এলাকাজুড়ে বালু চর।
এ চরগুলোতেও বিস্তৃর্ণ ফসলে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় চিলমারী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে কুড়িগ্রাম জেলা সদরে যাওয়া নৌকাগুলোও নদে পানি না থাকায় যেতে অনেক সময় লাগে। এতে জেলা সদরে যাত্রীদের চলাচলে চরমভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বন্যা মৌসুমে খরস্রোতে পানিতে তলিয়ে যায় সব বালুচর। একসময় এ নদীতে আশপাশের মানুষ মাছ ধরে জীবনযাপন করতেন। বর্তমানে বালুচরে পরিপূর্ণ হওয়ায় এবং নদীতে পানি না থাকায় নদের পাশের মানুষের পেশাও বদলে যাচ্ছে। নভেম্বর, ডিসেম্বরের দিকে পানি কমে এলে বালুচর বোরো চাষের উপযোগী তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এসব মানুষ। চলে ধান চাষ।
আরও পড়ুনগতকাল সোমবার সরেজমিনে এসব এলাকায় গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, বলদমারা ঘাটের পশ্চিম পাশে হলহলিয়া নদের বুকে চরের জমিতে বাইটকামারীর আফসার আলী নামের একব্যক্তি বোরো চাষ করেছেন। পাশেই অন্য ব্যক্তিরাও এবার তাদের জমিতে বোরো ধান চাষ করছেন।
বোরো চাষি ফরিদুল হক, আফসার আলী জানান, নদের বালুচরে আবাদ করায় খরচ কম লাগে। এখানে বোরো আবাদে বাড়তি পানির সেচ লাগে না। খুব বেশি সারও ব্যাবহার করতে হয় না। উলিপুর উপজেলার পূর্বাংশের সাহেবের আলগা গ্রামের মোগল আলী বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের কাতলামারীর মুখটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় নদের তলদেশে বোরোধান চাষের উপযোগী হয়েছে।
এ মুখটি পুর্ণাঙ্গ বন্ধ করে দিতে পারলে নদের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে উলিপুর, চিলমারী উপজেলার পূর্বাংশ ও রৌমারী রাজিবপুর উপজেলার পশ্চিমাংশ হলহলিয়া ও সোনাভরি নদের পানি প্রবাহ কমে যাবে। সেই সাথে নদেরপাড়ের মানুষ নদের তীর ভাঙন থেকে রক্ষা পাবেন। অন্যদিকে গম, ধান, মরিচ, ভুট্টা, পাটসহ মৌসুমী ফসলগুলো ফলাতে পারবেন।
রৌমারী কৃষি অধিদপ্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইউম চৌধুরী বলেন, হলহলিয়া নদে একসময় খরস্রোতে কিছুই করা যেতো না। এবার এ নদীতে বলুচরে পরিণত হওয়ায় ভূমিহীন কৃষক ও জমির মালিকরা সুযোগে এসব নদী চরে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করতে দেখা গেছে। এবার নদের তলা শুকিয়ে যাওয়ায় তারা বোরো আবাদ করছেন।
মন্তব্য করুন