ভোর থেকে হাঁকডাকে শুরু কাজিপুরের পাটের হাট

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের ঐতিহ্যবাহী নাটুয়ারপাড়া, সোনামুখী ও ঢেকুরিয়া হাটে পাটের জমজমাট কেনাবেচা চলছে। এবছর ফলন ভালো হওয়ায় পাটের হারানো ঐতিহ্য আবারও ফিরে পেয়েছেন কৃষকরা। অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই পাটের ভালো দাম পেয়ে এ অঞ্চলের কৃষকরা প্রতি বছরেই পাটের আবাদ বাড়াচ্ছেন। আবারো পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চরাঞ্চলসহ ১২ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় এ মৌসুমে চার হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে তোষা জাতের চাষ হয়েছে চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। মেস্তা ৭৫ এবং দেশীসহ অন্যান্য পাট চাষ হয়েছে ৭৫ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যেই পাট কাটা জাগ দেওয়া ও শুকিয়ে বিক্রি শুরু হয়েছে পুরোদমে।
সপ্তাহের প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার ঢেকুরিয়া, বুধ ও শনিবার নাটুয়ারপাড়া এবং রবি ও বুধবার সোনামুখী হাটে ভোর রাত (ফজরের আগ) থেকেই কেনাবেচা শুরু হয়। সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়। বন্যার কারণে নাটুয়ারপাড়া হাটে কেনাবেচা হয় নৌকার ওপরে। কৃষকেরা যে নৌকা করে পাট নিয়ে আসেন সেই নৌকার কাছে পাইকারদের নৌকা ঠেকিয়ে দরদাম শুরু হয়।
এরপর দাম মিটে গেলে পাইকারের লোকজন কৃষকের নৌকা থেকে পাটের বোঝাগুলো নামিয়ে নেন। তবে শুধু কাজিপুরের কৃষকরাই নন আশপাশের ধুনট, সরিষাবাড়ি, সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জ সদর থেকেও পাটবোঝাই নৌকা আসে এই হাটে। এই হাটের ক্রেতারা আসেন জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর থেকে। নদীপথে পরিবহণ সুবিধা নিতেই এই হাটে কেনাবেচা হয় অনেক বেশি।
এছাড়া ঢেকুরিয়া হাটও যমুনার তীরে হওয়ায় এই হাটের পাটও নৌকাবোঝাই করে নদীপথে দেশের নানাস্থানে চলে যায়। এবছর প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে রং ও প্রকারভেদে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব তথ্য।
আরও পড়ুনজামালপুর থেকে পাট কিনতে আসা ব্যাপারী সলিম মিয়া জানান, সরিষাবাড়িতে আমাদের চার পুরুষের পাটের আড়তের ব্যবসা। প্রতিবার পাটের মৌসুমে আমরা তিন থেকে চার হাজার মণ পাট কিনি। পরে ঢাকায় পাঠাই।
সিরাজগঞ্জ শহর থেকে পাট কিনতে আসা সবুর ব্যাপারী জানান, ভালো এবং শুকনো পাট পেলে প্রতিহাটে ৩০/৪০ মণ পাট কিনি এই হাট থেকে।
নৌকায় পাট বিক্রি করছেন মাইজবাড়ী চরের কৃষক আয়নাল হক। তিনি বলেন, ‘৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করছিলাম। ফলন ভালো হইছিলো। আজ বেচতে এসে মোটামুটি যে দাম পাইছি তাতে আমি খুশি।’ হাটের ইজারাদার আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, এবার পাটের কেনাবেচা বেশ জমে উঠেছে। দূর দুরান্ত থেকে পাটের পাইকার আসেন। অনেকটা নিরাপদেই তারা পাট কেনন। এখানে নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, উপযুক্ত সময়ে সরকারি প্রণোদনা, মাঠে কর্মরত অফিসারদের সঠিক সময়ে পরামর্শ এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হওয়ায় এ বছর পাটের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। এ উপজেলায় প্রতি হেক্টরে প্রায় দেড় মেট্রিকটন পাটের উৎপাদন হয়েছে।
মন্তব্য করুন