ভিডিও সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫

শিকড় থেকে শিখরে

শিকড় থেকে শিখরে, ছবি: দৈনিক করতোয়া ।

এড. মোঃ মোজাম্মেল হক: জানা যায় পৃথিবীতে মোট সতেরটি সভ্যতা এসেছে, তার মধ্যে একটি সভ্যতা গ্রীক সভ্যতা। গ্রীসকে আধুনিক সভ্যতার জনক বলা হয়। গ্রীসে যে সকল দার্শনিকের জন্ম হয়েছে তাঁরা সবাই ছিলো স্বমহিমায় উজ্জল। সক্রেটিসের জন্ম গ্রীসে। সক্রেটিসের জ্ঞান চর্চার আলো যখন চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন অনেকেই তাঁর নিকট থেকে জ্ঞানের কথা শোনার জন্যে এবং জ্ঞান নেওয়ার জন্যে ভিড় করতো, কারণ এখনকার মতো তখন সোস্যাল মিডিয়া ছিলো না, জ্ঞানী লোকের নিকট থেকে জ্ঞানের কথা শুনে এবং তা হাতে কলমে শিক্ষা নিতে হতো। সক্রেটিস জ্ঞানের কথা বললে যারা তাঁর কাছে থাকতো তারা তা লিখে নিতো। যাহোক একদিন সক্রেটিস এথেন্সের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, তখন একদল ছাত্র তাঁকে দেখে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরে এবং সক্রেটিসকে জ্ঞানের কথা বলতে বলে, সক্রেটিস ছাত্রদেরকে জ্ঞানের কথা বলে উপদেশ দিবে এমন সময় একটি নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলা স্বল্প কাপড় পরে সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে সময় নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলারা ছাড়া কেহ ছোট কাপড় পরতো না, ছাত্ররা সক্রেটিসের দিকে মনোনিবেশ না করে সবাই সেই মহিলার দিকে
হা করে তাকিয়ে আছে। মহিলা গর্ব করে বলছে কি দার্শনিক তোমার দর্শন কোথায় গেলো, তোমার ছাত্ররাতো তোমার কথা শুনছে না, ওরাতো আমাকেই দেখছে, সুতরাং তোমার দর্শনের কোন মূল্য নাই, তোমার দর্শন মিথ্যা, তখন সক্রেটিস ঐ মহিলাকে বললো তুমিতো এদেরকে নিচের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছো, আর আমি ওদেরকে উপরের দিকে উঠানোর চেষ্টা করছি। উপরের দিকে উঠানো কষ্টের কাজ আর নিচের দিকে নামানো খুব সহজ কাজ, তুমি সহজ কাজটি করছো, সুতরাং এরাতো কোমলমতি এরা সহজ কাজটির দিকে ধাবিত হবে, এটাই নিয়ম। মনে রেখো প্রত্যেকটি কষ্টের কাজ পরবর্তীতে ভালো ফল দেয়। সক্রেটিস এভাবে উত্তর দেওয়ার জন্যে পতিতা মহিলাটি কোন উত্তর না দিয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যায়। তারপর সক্রেটিস তাঁর ছাত্রদের উপদেশ দিয়ে সেখান থেকে তিনিও চলে গেলেন।

যে কথা বলছিলাম, কষ্টের কাজ পরবর্তীতে ভালো ফল দেয়। এ কথাটি পুরোপুরি মানানসই করতোয়ার সম্পাদক জনাব মোজাম্মেল হক লালুর ক্ষেত্রে। তাঁরই মুখেই শোনা করতোয়া পত্রিকার গোড়ার দিকের কথা। অমানুষিক পরিশ্রম আর কষ্টের জীবন পার করেছেন এই পত্রিকা চালাতে গিয়ে, পরিবারকে সময় না দিয়ে পত্রিকাকে সময় দিয়েছেন। পত্রিকাকে একটি সন্তানের মতই ভালোবেসেছেন। করতোয়াকে তাঁর আর একটি সন্তান মনে করেছেন। নিরালস পরিশ্রম এবং সময়ের মূল্য দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আজকের এই করতোয়া। এক সময় পত্রিকার এই অবয়ব ছিলো না, লেটার প্রিন্টে ছাপা হতো এই পত্রিকা। ছবি ছাপাতে গেলে পত্রিকায় ব্লক করতে হতো। প্রতিদিন ব্লক ভাঙ্গা আবার টাইপের জন্য সাজানো ভীষণ একটি ঝামেলার কাজ ছিলো, যাদের বয়স ৬০ বা তার বেশি তারাই লেটার প্রিন্টের ছাপার কথা বলতে পারবেন। 

আশির দশক থেকে জনাব মোজাম্মেল হক এই পত্রিকার হাল ধরেন। আশির দশকে আজিজুল হক কলেজে পড়া অবস্থায় পত্রিকা পড়ার নেশা আমাকে পেয়ে বসে, সেই উঠতি বয়সে যে পত্রিকাটি পাঠক হিসাবে আমার ভালো লেগেছে পরিপূর্ণ বয়সেও সেই পত্রিকাটি আজও আমার কাছে একইভাবে ভালো লাগে, করতোয়ার প্রেম আমি ব্যক্তিগতভাবে ছাড়তে পারলাম না, যদিও আমি আমার আইন পেশায় আসার আগে একটি পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করেছি, তথাপিও করতোয়া না পড়লে কি যেন করা হয় নাই এমনটাই মনে হতো, আর এটাই হলো করতোয়ার বিশেষত্ব। যৌবনে যাকে ভালো লাগে পরিপূর্ণ বয়সে তাকে ভালো নাও লাগতে পারে কিন্তু করতোয়া তার ব্যতিক্রম।

ছাত্রাবস্থায় যে পত্রিকাটি পড়েছি আনন্দ পেয়েছি, এখনও সেই পত্রিকাই পড়ি, একইভাবে আনন্দ পাই, মাঝে কেটে গেছে ৫০টি বছর। ৫০টি বছর কম নহে। একটানা ৫০ বছর একটি পত্রিকার একজন সম্পাদক সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করা সম্ভবত করতোয়া ছাড়া আর কোন পত্রিকা বাংলাদেশে নেই। প্রথমত করতোয়া একটি আঞ্চলিক পত্রিকা ছিলো। সময়ের পরিক্রমায় তা এখন গোটা দেশের পত্রিকা হয়েছে। এই পত্রিকার বিশেষত্ব হলো স্থানীয় সংবাদকে গুরুত্ব দেওয়া, স্থানীয় সংবাদের পাশাপাশি জাতীয় সংবাদও একইভাবে পরিবেশন করা। করতোয়াকে অনুকরণ করে অনেক পত্রিকাই স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের সংবাদ ছাপাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু করতোয়া তার অভীষ্ট লক্ষে ঠিকই পৌঁছে গেছে।

আরও পড়ুন

করতোয়ায় একঝাঁক প্রবীণ-নবীন সাংবাদিক নিরলসভাবে রাতদিন কাজ করে বারো পৃষ্ঠার রঙ্গিন একটি ঝকঝকে পত্রিকা উপহার দেওয়া কম কষ্টের কাজ নহে। মাঠ পর্যায়ে প্রায় তিন শতাধিক সাংবাদিক প্রাণান্তকর চেষ্টা করে খবর সংগ্রহ করে পাঠিয়ে থাকে পত্রিকার অফিসে, তাঁদের অবদান ছোট করে দেখার বিষয় নয়। সম্ভবত বার পৃষ্ঠার রঙ্গিন আঞ্চলিক কাগজ করতোয়া ছাড়া বাংলাদেশে আর একটিও নেই। সম্পাদকের সঙ্গে আর একটি মানুষের কথা না বললে নিজেকে অপরাধী মনে হবে সেটা হচ্ছে উপদেষ্টা সম্পাদক জনাব ওয়াসিকুর রহমান বেচান, যাঁর নিরালস প্রচেষ্টায় পাঠকের জন্যে ভালো উপসম্পাদকীয় আমরা পড়তে পারি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নবীন লেখকদের তিনি উৎসাহ দিয়ে থাকেন। অনেক জাতীয় পত্রিকা ঢাকা থেকে প্রকাশ করে কলেবর বৃদ্ধি পেলে অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন জেলায় একযোগে ছাপানো হয়, কিন্তু করতোয়া তার ব্যতিক্রম। করতোয়া প্রথমত বগুড়া থেকে ছাপানো হলেও এখন একযোগে রাজধানী ঢাকা থেকে ছাপানো হয়। ঠিক শিকড় থেকে শিখরে উঠলে যেমন হয়।
 
                                                লেখক: পি পি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২,বগুড়া।

                                                                                      ০১৭১১-১৯৭৭১৯

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়

ফের নাফ নদী থেকে ট্রলারসহ ৭ জেলেকে আটক করলো আরাকান আর্মি

বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করা: জাতিসংঘ

এশিয়া কাপের আগে স্পন্সর হারাচ্ছে ভারত

“পঞ্চশ- এ দৈনিক করতোয়া”

জাটকা নিধন বন্ধ না হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন কমছে: মৎস্য উপদেষ্টা