ভিডিও মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

মহাজগত

বিজ্ঞানীদের অমীমাংসিত সীমানা দৌড়-২!

মহাজগত এক বিশাল রহস্য। মহাবিশ্বের দিকে দৃষ্টি ফেরালে যে কোনো মানুষকে বিস্মিত হতে হয়। মহাবিশ্বের মহিমা সৌন্দর্য, পরিপূর্ণতা, শৃঙ্খলা এবং সামঞ্জস্যতার বিস্ময় ও রহস্য শেষ হওয়ার নয়। মানুষ আদিকাল থেকেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়েছে। অসংখ্য তারার মাঝে জ¦লজ¦ল করা নক্ষত্রমণ্ডল, ধূসর কুয়াশার মতো ছায়াপথ, আর রাতের আকাশে রহস্যে মোড়ানো অন্ধকার সবকিছুই এক অদ্ভুত কৌতূহল জাগায়। এই কৌতূহল থেকেই শুরু হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের যাত্রা। আধুনিক বিজ্ঞান জানার চেষ্টা করছে এই আকাশে শুধুই নক্ষত্র নয়, নক্ষত্রের বিশাল বিশাল সমষ্টি আছে- যেগুলোকে “গ্যালাক্সি” বা ছায়াপথ বলা হয়। রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি। এবং বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি নিয়ে তৈরি হয়েছে এক একটা মহাবিশ্ব এবং ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মহাবিশ্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে মহাজগত। এই মহাজগতের শেষ কোথায় এর জবাব তিনিই জানেন যার ইশারায় এই মহাজগত নিখুঁতভাবে তৈরি হয়েছে।    

পৃথিবী আমাদের সৌরজগতের একটি ছোট্ট গ্রহ আর এই সমগ্র সৌরজগৎ ছায়াপথের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। গ্রহটি সাইজে তেমন আহামরি বড় কিছু নয়। সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি আয়তনে পৃথিবীর চেয়ে ১৩শ’ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৪৮ মিলিয়ন কিলোমিটার। এই দূরত্ব থেকে পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে সময় নেয় প্রায় সাড়ে আট মিনিট। সূর্য একটি মাঝারি আকারের সাধারণ নক্ষত্র। এর অবস্থান একটি স্পাইরাল গ্যালাক্সির অভ্যন্তরে। স্পাইরাল গ্যালাক্সিটির নাম মিল্কিওয়ে। এই গ্যালাক্সির ছোট একটি সর্পিল বাহুর ভেতর সূর্যের বসবাস। মিল্কিওয়ের এই বাহুটির নাম অরায়েন-সিগনাস আর্ম। এই বাহু থেকে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ। এই দূরত্ব থেকে সূর্য মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে সূর্যের মতো ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে। একাধিক গ্রহ নিয়ে যেমন সৌরজগৎ গড়ে ওঠে, তেমনি অসংখ্য সৌরজগৎ মিলে তৈরি হয় একটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি। আমাদের সৌরজগৎ যে ছায়াপথের অন্তর্গত তার নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। আমরা যতটা কল্পনা করতে পারি তারচেয়েও অনেক অনেক গুণ বড় আমাদের এই ছায়াপথ।

একটি ছায়াপথের তুলনায় একটি সূর্য অতি সামান্য বিন্দু কণা মাত্র। আমাদের সূর্যের চেয়েও বড় অসংখ্য তারকা, নক্ষত্র, নীহারিকা, গ্রহ-উপগ্রহ, সৌরজগৎ এবং মহাজাগতিক সকল বস্তুর সমন্বয়ে ছায়াপথ গড়ে ওঠে। একটি আদর্শ ছায়াপথে এক কোটি থেকে এক লক্ষ কোটি তারকা পর্যন্ত থাকতে পারে, মহাজাগতিক বস্তুর দূরত্ব পরিমাপ করতে আমরা আলোকবর্ষ ব্যবহার করি। আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে একলক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল। এক বছরে আলো যত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে তাকে আলোকবর্ষ বলা হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে একটি ছায়াপথ থেকে আরেকটি ছায়াপথের দূরত্ব হতে পারে কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি আলোকবর্ষ। আমরা যেখানে বসবাস করি সেই গ্যালাক্সির নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি, এই গ্যালাক্সির মধ্যে আমাদের সৌরজগৎ খুবই ক্ষুদ্র এবং আমাদের পৃথিবী একটি পরমাণুর সমতুল্য। একদম পরিষ্কার রাতের আকাশে অতি উজ্জ¦ল আলোর যে বন্ধনি দেখা যায় সেটি হলো আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথ। 

বিজ্ঞানীদের বক্তব্যে জানা যায় পৃথিবী যেমন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তেমনি নক্ষত্রগুলো গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাকহোল ঘিরে ঘুরতে থাকে। তেমনি একটি ছায়াপথ কোনো একটি কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরতে থাকে, আমাদের এই ছায়াপথ তার আবর্তন পূর্ণ করতে প্রায় ২৫ কোটি বছর সময় নেয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন পৃথিবীতে যত বালুকণা রয়েছে তার চেয়েও অনেক গুণ বেশি পরিমাণে ছায়াপথ এই মহাবিশ্বে রয়েছে। বর্তমানে আমাদের কাছে হাবল টেলিস্কোপসহ আরও শক্তিশালী টেলিস্কোপ রয়েছে। এই টেলিস্কোপ দিয়ে যতদূর পর্যন্ত আমরা দেখতে পারি তাকে বলা হয় পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব বা Observable Universe. মহাবিশ্বে প্রধানত দুই ধরনের ছায়াপথ দেখতে পাওয়া যায়, একটি হলো নীল ছায়াপথ, আর একটি হলো লাল ছায়াপথ। যে ছায়াপথে এখনো নতুন নতুন তারা জন্ম হচ্ছে সেগুলোকে নীল ছায়াপথ বলা হয় এবং যেসব ছায়াপথে নতুন তারার উৎপত্তি থেমে গেছে সেগুলোকে বলা হয় লাল ছায়াপথ। বিজ্ঞানীদের ধারণামতে প্রায় ২০০ কোটি বছর পর একটি ছায়াপথ নীল ছায়াপথ থেকে লাল ছায়াপথে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ বলতে নক্ষত্রমণ্ডলীর একটি বিশাল গ্রুপকে বোঝায়। মহাকর্ষ বলের কারণে একটি গ্যালাক্সির মধ্যে নক্ষত্রগুলো একত্রে থাকে। সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সি, আইসি ১১০১ আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ গুণ বড়।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কাছাকাছি আরো ৫৪টি গ্যালাক্সি রয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এদের নাম দিয়েছেন লোকাল গ্রুপ। এর মধ্যে রয়েছে, অ্যান্ড্রোমিডা, ছোট এবং বড় ম্যাগেলেনিক ক্লাউড, ট্রাইঅ্যাঙ্গুলাম ইত্যাদি ছোট বড় নানা গ্যালাক্সি। এই লোকাল গ্রুপে মিল্কিওয়ের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী গ্যালাক্সি হলো অ্যান্ড্রোমিডা। মিল্কিওয়ে থেকে অ্যান্ড্রোমিডার দূরত্ব ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। লোকাল গ্রুপের অবস্থান হলো আরেকটি বড় গ্যালাক্সি গ্রুপের ভেতরে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন, ভার্গো সুপার ক্লাস্টার। এই সুপার ক্লাস্টারে কমপক্ষে ১০০ গ্যালাক্সি রয়েছে। মহাবিশ্বে এরকম অসংখ্য সুপার ক্লাস্টার গ্যালাক্সি আছে। 

যেমন সূর্যের মৃত্যু ঘটে তেমনি ছায়াপথের মৃত্যু ঘটে। ছায়াপথের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো ছায়াপথের গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়া, কিন্তু এই গ্যাস কীভাবে শেষ হয়, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি তবে অনেকেই মনে করেন গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাকহোল এই গ্যাস শুষে নেয় এবং একটি গ্যালাক্সির মৃত্যু ঘটে।

আসলে মহাবিশ্বের মোট গ্যালাক্সির সংখ্যা নির্ধারণের জন্য বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সির সংখ্যা হিসাব করার একটি কৌশল বের করেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা টানা ১১ দশমিক ৩ দিন হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে রাতের আকাশের একটি নির্দিষ্ট অংশ পর্যবেক্ষণ করেন। টেলিস্কোপের সাহায্যে কাছের এবং দূরের অনেক গ্যালাক্সি থেকে আলো সংগ্রহ করেন। মহাবিশ্বের এই ছোট্ট অংশ পর্যবেক্ষণ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০ হাজার গ্যালাক্সির সন্ধান পান। মহাবিশ্বে এমন অনেক গ্যালাক্সি আছে, যেগুলোকে আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, পর্যবেক্ষণ করা যায় না কিন্তু মহাবিশ্বে আছে, এমন গ্যালাক্সির সংখ্যা প্রায় দুই ট্রিলিয়নের মতো হতে পারে। তবে মহাবিশ্বে ঠিক কতটি গ্যালাক্সি আছে, তা সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা কঠিন। কারণ মহাবিশ্ব ঠিক কত বড়, সেটাই আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। নিয়মিত বাড়ছে মহাবিশ্ব। প্রতিমুহূর্তে জন্ম হচ্ছে অসংখ্য গ্যালাক্সির। আবার মহাবিশ্বের এমন অঞ্চলও আছে, যেখান থেকে কোন আলো এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। সেই অঞ্চল সম্পর্কে আমরা আসলে কিছুই জানি না।

মহাকাশের এক বিস্ময় ব্ল্যাকহোল। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর হলো মহাশূন্যের এমন কিছু জায়গা, যেখানে মহাকর্ষবল আশপাশের সবকিছু টেনে তার কেন্দ্রে নিয়ে যায়। এমনকি আলোও টেনে নেয়। এ জন্যই একে ‘ব্ল্যাক’ বা কৃষ্ণ (কালো) বলে চিহ্নিত করা হয়। কারণ, সেখানে আলো শুধু ঢোকে, বেরোয় না। ফলে চোখে দৃশ্যমান হয় না। সামান্য জায়গায় অনেক বেশি পদার্থ ঘনীভূত হয় বলে এর বিরাট আকর্ষণশক্তি থাকে। কোনো বড় তারা (নক্ষত্র) দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে পড়ে নিজের কেন্দ্রে জড়ো হয়ে ব্ল্যাকহোলের উদ্ভব ঘটে। আশপাশের নক্ষত্রমণ্ডলী ও মহাজাগতিক গ্যাসীয় পদার্থের ওপর এর প্রবল মহাকর্ষবলের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোলের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন। ব্লাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি স্থান জুড়ে রয়েছে, যার মধ্যাকর্ষণ শক্তি এতই প্রখর যে তার হাত থেকে কোনো কিছুই পালাতে পারে না, এমনকি আলোর রশ্মিও। পৃথিবী থেকে এই ব্ল্যাকহোল ৫০ কোটি ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরে, এটার ভর (এর মধ্যেকার পদার্থের পরিমাণ) সূর্যের চাইতে ৬৫০ কোটি গুণ বেশি।

এই ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে এর আগে বিজ্ঞানীদের তেমন ধারণা ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে এ সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানা যাচ্ছে। ব্ল্যাকহোল হলো বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোনো বস্তু, যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না- এ ধারণা সর্বপ্রথম প্রদান করেন ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell)। ১৭৯৬ সালে গণিতবিদ পিয়েরে সিমন ল্যাপলেস একই মতবাদ প্রদান করেন তাঁর “Exposition du systeme du Monde”বইয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণে।

আরও পড়ুন

১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তার “জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্ব” দিয়ে ধারণা করেন ব্ল্যাকহোল থাকা সম্ভব। আর ১৯৯৪ সালে এসে নভোচারীরা প্রমাণ করেন আসলেই ব্ল্যাকহোল আছে। এটি কোন সায়েন্স ফিকশন নয়। জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড ১৯১৬ সালেই দেখানো, যেকোন তারকা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে এবং প্রথমবারের মতো মহাকাশ বিজ্ঞানীরা একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোলের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। যা মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটা বড় ঘটনা ছিল। বিজ্ঞানীদের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি বৃত্তাকার কালো আভার চারদিকে এক উজ্জ¦ল আগুনের বলয়। এ্যান্টার্কটিকা, স্পেন ও চিলির মতো পৃথিবীর নানা প্রান্তে বসানো আটটি রেডিও টেলিস্কোপের এক নেটওয়ার্ক দিয়ে এই ছবি তোলা সম্ভব হয়। এর আগে কোনো ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলা যায়নি। কারণ একক কোনো টেলিস্কোপে এর ছবি তোলার ক্ষমতা নেই। এমএইটসেভেন নামে একটি বহুদূরবর্তী গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের মধ্যে এটি পাওয়া গেছে।

একটি তারার মৃত্যু থেকে জন্ম নেয় একটি কৃষ্ণগহ্বর। বিজ্ঞানীদের মতে, সব চেয়ে ছোট ব্ল্যাকহোলটির জন্ম ঠিক এই মহাবিশ্বের জন্মের সময়। একটি নক্ষত্রের নির্দিষ্ট জ¦ালানি নিঃশেষ হয়ে গেলে এর মৃত্যু ঘটে। যতক্ষণ পর্যন্ত এর অভ্যন্তরীণ হাইড্রোজেন গ্যাস অবশিষ্ট থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর ভেতরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া চলতে থাকে। হাইড্রোজেন শেষ হয়ে গেলে এর কেন্দ্রীয় মূলবস্তু সংকুচিত হতে থাকে। এভাবে একটি তারার মৃত্যু হয়। ব্ল্যাকহোলে রয়েছে শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র। প্রত্যেক ব্ল্যাকহোলের চারদিকে একটি সীমা আছে যেখানে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। এইভাবেই মহাকাশের মহাবিস্ময় হয়ে বেঁচে আছে ব্ল্যাকহোল।

সৌরজগত, ছায়াপথ, ব্লাকহোল তদুপরি মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই তেমনি মহাজগত নিয়েও রয়েছে উৎফুল্ল। তাই মহাজগত নিয়ে হয়েছে বিপুল গবেষণা। মহাজগত হলো এমন এক জায়গা যেখানে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন মহাবিশ্ব। তার ভেতরে রয়েছে ছায়াপথ, গ্রহ, নক্ষত্র, ইত্যাদি মহাজাগতিক বস্তু। বিজ্ঞানিদের তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত তারা মাত্র ৯০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত রহস্য ভেদ করতে পেরেছে। তাই ৯০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্তই আমাদের ব্রহ্মাণ্ড। কোনোকিছুর আকার-আকৃতি, আয়তন, উপাদান জানার একটিই উপায় ঐ বস্তুটিকে বস্তুর বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিজ্ঞানিরা আমাদের ব্রহ্মাণ্ডকে এখনো বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি। এ জন্যই এতো রহস্য। বিজ্ঞানীরা বলেন অসীমেরও একটি সীমা আছে। সীমার মাঝেই সবটা। আগে ধরা হতো আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম অসীমে। কিন্তু পরে জানা গেলো, এই অসীম আসলে ১৩.৭ বিলিয়ন বছর। 

মাল্টিভার্স বা একাধিক মহাজগত। মাল্টিভার্সের ধারণা কসমোলজি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং দর্শন  বিজ্ঞানের এই তিনটি শাখা থেকে এসেছে। আমেরিকান দার্শনিক উইলিয়াম জেমস ১৮৯৫ সালে সর্বপ্রথম মাল্টিভার্স শব্দটি ব্যবহার করেন। মাল্টিভার্স শব্দটি দিয়ে একাধিক ব্রহ্মাণ্ডকে বুঝায়। প্যারালেল ইউনিভার্সও তাই, কিন্তু সাথে আরো কিছু অর্থ বহন করে। প্যারালেল ইউনিভার্স বলতে আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মতো অবিকল আরো কিছু ব্রহ্মাণ্ডকে বুঝায়। তবে সেখানে সামান্য পার্থক্য অবশ্যই থাকবে। প্যারালেল ইউনিভার্স অন্য ইউনিভার্সে বা ব্রহ্মাণ্ডে প্রাণের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে, যেটা মাল্টিভার্স করে না।

মহাজগতের আকার আকৃতি ও পরিধি নিখুঁতভাবে আয়ত্তে আনা মানব জ্ঞানে সম্ভব নয়। মহান আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বিশ্লেষণ ও রবের অসীম ক্ষমতাকে অকপটে বিশ্বাস নিঃসন্দেহে একটি বড় ইবাদত। দৃষ্টি সীমার মধ্যে ও বাহিরে নিখুঁত কারুকার্যে সুশোভিত মহাজগতে রয়েছে মহান রবের কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন। রবের এই কুদরত নিয়ে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অভিরাম। বিজ্ঞানীদের ধারণামতে আমাদের মিল্কওয়ে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে রয়েছে প্রায় ৪০০শত বিলিয়ন নক্ষত্র যা’ একটি নক্ষত্র থেকে অন্য একটি নক্ষত্রের দূরত্ব কয়েক হাজার আলোক বর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং একইসাথে একটি ছায়াপথ থেকে আরেকটি ছায়াপথ এর দূরত্ব রয়েছে কয়েক কোটি আলোকবর্ষ। আধুনিক বিজ্ঞানিরা ধারণা করেন পৃথিবীতে যত বালুকণা রয়েছে তার চেয়ে বেশি রয়েছে ছায়াপথ। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল কিন্তু মহা বিশ্বে এমনও তারকা রয়েছে সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে ১৪ বিলিয়ন বছর যাবত পৃথিবীর দিকে আলো ধাবিত করে যাচ্ছে কিন্তু আলো এসে এখনও পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারেনি। এই সবই মহান রবের কুদরতের ইশারায় তৈরি। এই সবইতো গেলো মহাবিশ্বের কথা কিন্তু এই ধরনের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মহাবিশ্ব নিয়ে আবার গঠিত হয়েছে আল্লাহর রহস্যময় সৃষ্টি এই মহাজগত। এই রহস্য ভেদকরা সৃষ্টি জগতের কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। মহাজগতে সবকিছুই স্রষ্টার ইশারায় আপন আপন কক্ষপথে সস্তরণ করে। বিজ্ঞানিরা যতটুকু আবিষ্কার করেছেন তা অনেকটা অনুমান নির্ভর। অসীমকে কখনও সীমিত জ্ঞান দিয়ে আয়ত্তে নেয়া সম্ভব নয়। আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য কোন বিজ্ঞানী বা মানব সৃষ্ট যন্ত্র দ্বারা আয়ত্ত করা সম্ভব নহে। আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য বেশি বেশি অধ্যয়নের মাধ্যমে আল্লহর প্রতি আমাদের ঈমানকে আরও মজবুত করতে পারি। আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য মুমিনদের হৃদয়কে আরও শীতল করে দিতে পারে। আল্লাহ মহান আল্লাহ্ অদ্বিতীয় আল্লাহ্ সবকিছুর স্রষ্টা।

লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক, Email: khobir72@gmail.com 01711-273280

 

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চলতি জুলাই মাসেও চালু হচ্ছে না জবি'র ফুডকোর্ট

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে যুবক ছুরিকাহত ২ জন গ্রেফতার

বগুড়ার শেরপুরে সাবেক কাউন্সিলর ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শুভ গ্রেফতার

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে দুটি দই ঘরের ২০ হাজার টাকা জরিমানা

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে অগ্নিকাণ্ডে ৫টি দোকান পুড়ে গেছে