চাকরির প্রলোভনে জামানতের অর্ধকোটির বেশি টাকা নিয়ে উধাও ‘সমাধান’

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: লেখাপড়া করে বাড়িতেই বসে ছিলেন সাইফুল ইসলাম। হঠাৎ করে ভাল বেতনের অফার পেলেন একটি চাকরির। বুক ভরা আশা নিয়ে এক বন্ধুর পরিচয়ে গেলাম সমাধান ফাউন্ডেশন নামে একটি এন জি ও অফিসে। মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতন দিবে। কিন্তু চাকরির জামানত হিসেবে ৩০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। বিশ্বাস করে টাকা দিলাম। যোগদান করে নেওয়া কথা বলে আজ নিচ্ছি, কাল নিচ্ছি কয়েক মাস গত হয়েছে, যোগদানতো দুরের কথা, এখন দেখছি সেখানে আর অফিসই নেই। এসব কথাগুলো কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বললেন, জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের আঁওড়া মহল্লার ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম।
ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জয়পুরহাটের প্রায় দুই শতাধীক বেকার যুবকদের নিকট থেকে জামানতের কথা বলে ৬০ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা ‘সমাধান ফাউন্ডেশনের’ কর্মকর্তারা। তারা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে বগুড়া শহরের নামাজগড় এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বগুড়ার ও জয়পুরহাটে প্রতারণা করেছেন। প্রচার চালিয়ে জামানতের টাকা নিয়ে তারা ছয় মাস পর সবকিছু গুটিয়ে লাপাত্তা।
যেভাবে প্রতারণায় জড়েন সাইফুলসহ অন্যরা, ‘২০২৪ সালের শেষের দিকে এক বন্ধুর সাথে বগুড়া শহরে সমাধান ফাউন্ডেশন অফিসে যান। সেখানে পরিচয় হয় আশরাফুল্যা, রাফিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন লোকের সঙ্গে। যারা নিজেদের সমাধান ফাউন্ডেশনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। কথাবার্তা শুনে বিশ্বাস করে ফেলেন তিনি। তাদের দাবি ছিল, সমাধান ফাউন্ডেশন একটি উন্নয়ন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। যা দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রজেক্ট হিসেবে চালু করতে যাচ্ছেন। যেখানে ফুড প্রোডাক্ট, সুপারশপ, রিসোর্ট, ব্রিক ফিল্ড ও পানির ফ্যাক্টরির মাধ্যমে বড় পরিসরে কর্মসংস্থান হবে। এসব প্রডাক্ট বাজারজাত করনের জন্য জনবল প্রয়োজন। মাসিক বেতনও ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত দেওয়া হবে। অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। এ জন্য প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জামানত হিসেবে দিতে হবে। যা ফেরত যোগ্য। এসব কথায় গত কয়েক মাসে জয়পুরহাটের ১৯৭ জন তরুণ-তরুণী প্রত্যকে ৩০ হাজার টাকা করে জামানত হিসেবে জমা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি কেউই পায়নি বরং সবাই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।’
প্রতারণার শিকার বগুড়ার মালতিনগরের বাসিন্দা নাফিউর রহমান বলেন,‘আমিসহ বগুড়ার প্রায় তিনশতাধীক বেকার যুবক তাদের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আমি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ। বাধ্য হয়ে সমাধান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খন্দকার মেহেদী হাসানের নামে বগুড়া সদর থানা আমলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছি। তার ঠিকানা রোড নং ৩, বাসা নং ৫, সেক্টর ১০, উত্তরা ঢাকা।’
ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ আমি আর নাফিউর এক সঙ্গে বগুড়াতে লেখাপড়া করেছি। সেই সুবাদেই আমি সমাধান ফাউন্ডেশনে চাকরির জন্য ৩০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে জমা দিয়েছি। জয়পুরহাটের ১৯৭ জনের টাকাই তার কাছে জমা হয়েছে। আমি নিজেও ২৫ জনকে নিয়ে গিয়ে নাফিউর রহমানের কাছে টাকা জমা দিয়েছি। ওই ২৫জন এখন আমাকে চাপ দিচ্ছে।’
আরও পড়ুনআরেক ভূক্তভোগী সোহেল রানা বলেন,‘প্রতারণার এই সুপরিকল্পিত চক্রের মূল মেহেদী। তিনি ঢাকায় থেকে সারা দেশে সমাধান ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কখনো ‘এনজিও’ কখনো ‘চেইন কোম্পানি’ আবার কখনো ‘সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। পরে জানতে পারি তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতারণা করেছেন। সরকারের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন আর কোথাও এমন প্রতারণা করতে না পারেন সে দিকে নজর দিতে।’
জয়পুরহাট শহরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন,‘আমার কয়েকজন পরিচিতজন চাকরি নিয়েছেন সমাধান ফাউন্ডেশনে। আমি শুনে বিষয়টির খোঁজ নিতে বগুড়াতে গিয়েছিলাম। তবে তারা যা বলছে, তাতে আমার বিশ্বাস হয়নি। আমি সবকিছু শুনে চাকরি না করে ফিরে আসছি।’
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াজেদ আলী বলেন,‘বগুড়া সদরে এনজিও’র তালিকায় সমাধান ফাউন্ডেশ নামে কোনো এনজিও’র নাম নেই। প্রতারণার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন