ভিডিও সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫

গাইবান্ধায় জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে চাকরির জন্য টাকা নেয়ার অভিযোগ

গাইবান্ধায় জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে চাকরির জন্য টাকা নেয়ার অভিযোগ, ছবি: সংগৃহীত।

মফস্বল ডেস্ক: গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজের বিরুদ্ধে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার নামে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই জামায়াত নেতা।

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রতারণার শিকার দুই ভুক্তভোগী গত ২ আগস্ট উপজেলা ও জেলা আমির বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এতে দলীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়েন সিরাজুল ইসলাম। পরবর্তীতে সিনিয়র নেতাদের মধ্যস্থতায় টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন সিরাজুল।  জানা গেছে, বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে সাদুল্লাপুর জামায়াত কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে দলীয় নেতারা বিষয়টির সমাধান করেছেন। 

ভুক্তভোগীদের একজন মাসুদ রানাও জামায়াত নেতা। তিনি দমোদরপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী মাসুদ রানা নিজেই তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। তিনি লিখেন, ‘থানা আমিরের নেতৃত্বে সমাধান হয়েছে’। পোস্টটি ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে এবং উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এরইমধ্যে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা ও ভুক্তভোগীদের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া এ ঘটনার আরও একটি ভিডিও ও অডিও রেকর্ড পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী মাসুদ রানা লিখিত অভিযোগে জানান, শিক্ষক নিবন্ধনে পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে সিরাজুল তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। পুরো টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি বারবার চাপ দেন। পরে চাচা আকবর আলীর অফিসে গিয়ে সিরাজুলকে ৫০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর টাকা ফেরত চাইলে নানা অজুহাত দিতে থাকেন সিরাজুল।

আরেক ভুক্তভোগী আব্দুল হাদী জানান, তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন সিরাজুল। পরে ৭৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয় এবং তিনি ১৫ হাজার টাকা দেন। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে টাকা ফেরত চাইলে সিরাজুল তাকেও নানা অজুহাত দিতে থাকেন। পরে দলীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় টাকা ফেরত পান হাদী।

সম্প্রতি সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পাতিল্যাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা মফিজল হকও সিরাজুলের বিরুদ্ধে জামায়াতের উপজেলা ও জেলা আমিরের কাছে অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৮ জুলাই সন্ধ্যায় সিরাজুল ২০-২৫ জনকে নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায় এবং ছেলে তাজুল ইসলামকে অপহরণের চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয়দের সহায়তায় অপহরণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তার এমন কাণ্ডে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে মফিজল হক বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অথচ তাকেই সিরাজুল ইসলাম হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এতে তিনি পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক জামায়াত নেতা জানান, সিরাজুল দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিবন্ধন ও সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে অনেকের কাছে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি এক চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে প্রায় ১৭ লাখ টাকা নেওয়ার ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে সমালোচনার জন্ম দেয়। পরে ভুক্তভোগী ও তার পক্ষের লোকজন তাজুল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে সিরাজুলের সঙ্গে বৈঠক করেন। যেখানে কয়েকজন দলীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিরাজুল টাকা লেনদেন ও ব্যাংকের চেক নেওয়ার বিষয় স্বীকার করেন। প্রমাণ হিসেবে একজন ৩ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করেন। যা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেই ভুক্তভোগী বলেন, সরকারি চাকরির আশায় সিরাজুল ইসলামের কাছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা কয়েক দফায় দেন তিনি। পরে তিনি আরও ২ লাখ টাকা দাবি করেন।

এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. এরশাদুল হক ইমন বলেন, এটি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অভিযোগের পর তা দলীয়ভাবে সমাধান হয়েছে। সিরাজুল টাকা নেননি, তিনি শুধু মধ্যস্থতা করেছেন বলেও দাবি উপজেলা জামায়াত আমিরের।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মো. রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিনটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে এসব বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সিরাজুল সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করানোর অনুরোধে তিনি অভিযোগকারীদের কান্তনগর এলাকার জহুরুল ইসলাম নামে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এর বেশি কিছু নয়। তিনি নিজে কোনো টাকা নেননি বলে দাবি করেন। 

টাকা লেনদেনের ভিডিও ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি চাকরি দেয়ার আশ্বাসে দমোদরপুরের মোস্তফা নামের একজন তাজুলের মাধ্যমে প্রায় ১৭ লাখ টাকা নিয়েছে। পরে দুই লাখ টাকা দেয়ার জন্য তাজুল তাকে বাড়িতে ডেকে আনে, যেখানে দলীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তার মতে, এসব ঘটনা সেক্রেটারি হওয়ার আগের। রাজনৈতিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে কয়েকজন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোট গণনার সময় থাকতে পারবেন গণমাধ্যমকর্মী

ঠাকুরগাঁওয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩ মাদকসেবীর কারাদণ্ড

মগবাজারে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ,গ্রেফতার ১

ঢাবির আন্তঃবিভাগ বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন সাংবাদিকতা বিভাগ

জ্বালানিবাহী বিদেশি ট্যাঙ্কার জব্দ করেছে ইরান

রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে জামাই-শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৪