ভিডিও রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

শুধু আইন দিয়ে নয়, মানবাধিকার সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : আসিফ নজরুল

শুধু আইন দিয়ে নয়, মানবাধিকার সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : আসিফ নজরুল, ছবি: দৈনিক করতোয়া ।

ঢাবি প্রতিনিধি : মানবাধিকার একটি সংস্কৃতি। এটা শুধু আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়-এর জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আত্মশুদ্ধি, স্বচ্ছতা এবং সম্মিলিত উপলব্ধি-মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

আজ শনিবার (২৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’ আয়োজিত ‘১১তম মানবাধিকার সম্মেলন ২০২৫’-এ প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় ড. নজরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রের মূল তিনটি অঙ্গ-নির্বাহী, আইন প্রণয়ন ও বিচার বিভাগ-এই জায়গাগুলো সংস্কার না করে কেবল মানবাধিকার কমিশন কিংবা তথ্য কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা-এসব শুধু ফাঁকা কাজ হয়ে থাকে। আসল সমস্যার গোড়ায় হাত না দিলে পরিবর্তন আসবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখি ইউরোপ-আমেরিকায় মানবাধিকার কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, অস্ত্র ব্যবসা ও স্বৈরশাসকদের সহায়তার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত। এটা চরম দ্বিচারিতা।’

ক্ষমতার অপব্যবহার প্রসঙ্গে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘যখন ক্ষমতা হারানোর ভয় চলে যায়, তখন রাষ্ট্র দানবে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমরা তার চরম উদাহরণ দেখেছি-এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ চিরতরে পঙ্গু হয়েছে। এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। আশাবাদী হতে হবে ঠিকই, তবে ইউটোপিয়ায় (কল্পলোক) ডুবে থাকা যাবে না।’

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ একরামুল হক বলেন, ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু সংবিধানেই সুন্দর শব্দ লেখাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন এর বাস্তবায়ন। কিন্তু যদি আদালতকেই স্বৈরতন্ত্রের অংশে পরিণত করা হয়, তাহলে আইনের ভাষায় লেখা কথাগুলোর কোনো মূল্য থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার প্রয়োগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। তাদের বলতে হবে-আমি কোনো রাজনৈতিক দলের দাস নই, আমি আইনের কর্মচারী।’ তিনি ২০২৪ সালে কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর দেশের সামনে আসা ‘বিরল সুযোগ’র প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এখন সময় বাস্তবতার আলোকে জবাবদিহিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার। এই সংস্কারের মধ্য দিয়েই একটি মানবিক রাষ্ট্র গড়া সম্ভব।’

আরও পড়ুন

সেমিনারে গুম হওয়া আইনজীবী আহমেদ বিন কাশেম ও ছাত্রনেতা মাইকেল চাকমার পরিবার, এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবার সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। শহিদ শাহরিয়ার খানের মা সানজিদা খান বলেন, ‘আমার সন্তান এই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে। আমরা এমন এক রাষ্ট্রে বাস করি, যেখানে করদাতার টাকায় কেনা অস্ত্রই জনগণের বুকে ছোঁড়া হয়। এটা কোনো সভ্য রাষ্ট্রের চিত্র হতে পারে না।’ 

গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা মাইকেল চাকমা বলেন, ‘আমাকে যখন তুলে নেওয়া হয়, তখন পরিবার, স্বজনেরা বারবার খোঁজ করেছে। একসময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আমার বাবাও মারা যান। পরিবার এমনভাবে ভেঙে পড়েছিল যে একসময় আমার শেষকৃত্য পর্যন্ত করে ফেলে।’ তিনি বলেন, ‘আজ আমি ফিরে এসেছি, কিন্তু ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে-এই প্রশ্ন রয়ে গেছে। আমরা যেন একত্রে বসবাস করতে পারি, সেই স্বপ্নে আমি আজও লড়াই করে যাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে আয়োজিত ‘মানবাধিকার অলিম্পিয়াড ২০২৫’-এ বিজয়ী ১০ শিক্ষার্থীর হাতে সম্মাননা স্মারক, সনদ, ব্যাগ ও অর্থ পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রংপুরের বদরগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় মদসহ আটক ১

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় শিশু ও নারী নির্যাতন মামলার আসামিসহ গ্রেফতার ২

মুজিববাদি সংবিধানকে গত জুলাইয়ে আমরা কবর দিয়েছি : বগুড়ায় জুলাই সমাবেশে জাহিদ আহসান

ফ্যাসিস্ট ও খুনীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না : গোলাম রব্বানী

বগুড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজে পরিচিতি সভায় সাবেক এমপি লালু

বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে লাখো কন্ঠে শপথ পাঠ