ভিডিও সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালের প্রভাবে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালের প্রভাবে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : নদীমাতৃক এই দেশে ‘আমরা মাছে ভাতে বাঙালি’ প্রবাদ এখন শুধু পাঠ্য বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে এ চিত্র ভিন্ন। একসময় গ্রাম বাংলার জলাশয়ে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে অনাবৃষ্টি-খরা, খাল-বিল ভরাট, মাত্রারিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, আবাসস্থল ধ্বংসসহ নানা কারণে আশঙ্কাজনকহারে কমেছে দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছ। এসবের সাথে এবার যোগ হয়েছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল।

চলতি বর্ষা মৌসুমে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ছোট যমুনা, তিলাই খাল ও ইছামতি নদীসহ বিভিন্ন খাল-বিল, ডোবা, জলাশয়ে দেশি মাছ নিধনের মহোৎসব চলছে। উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পুরাতনবন্দর, দাদপুর, মালিপাড়া, ত্রিমোহনী, বেলতলীসহ খয়েরবাড়ী ও দৌলতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এ জাল দিয়ে মাছ শিকারে মেতে উঠেছে কিছু অসাধু মৎস্য শিকারি।

এছাড়া বিভিন্ন নিচু জমি, ধানের জমি, খাল-বীল ও জলাশয়ে অবৈধ চায়না দুয়ারি জালের ব্যাপক বিস্তার ঘটিয়ে বর্ষায় মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিম দেওয়া মা মাছসহ পোনা মাছ নিধন করছে অনেকে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এতে প্রচলিত পদ্ধতিতে টিকতে না পেরে পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন প্রকৃত মৎস্যজীবীরা। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য বিভাগের চরম উদাসীনতায় অসাধু মৎস্য শিকারিরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা জানান, লোহার রিংয়ের সাথে মিহি সুতোয় তৈরি জালে আটকা পড়ে শুধু মাছই নয়, মারা পড়ছে শামুক-ঝিনুক, সাপ, কাঁকড়া-ব্যাঙ, কুচিয়াসহ অসংখ্য জলজ প্রাণি। এতে মিঠা পানির দেশীয় মাছ বিলুপ্তসহ জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়ছে। অপরদিকে পরিশ্রম ছাড়াই এই জাল মাছের বিচরণস্থলে বসিয়ে রাখলেই পাওয়া যায় প্রচুর মাছ। ফলে ভিন্ন পেশার মানুষও নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ শিকারে ঝুঁকে পড়েছেন।

উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৎস্যজীবী কেরু মহন্ত বলেন, কিছুদিন আগেও নদীতে অনেক মাছ ছিল। মাছ ধরেই সংসার চলতো। চায়না দুয়ারি জালের কারণে নদীতে আর মাছ পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন তিনি। এখন ঝালমুড়ি বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালান। তার মত অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।

আরও পড়ুন

সচেতন মহলের দাবি, ভরা প্রজননকালেও অবাধে চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরায় নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না। ফলে প্রকৃতিকভাবে মাছের বংশ বৃদ্ধি ও উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। এখনই এ জালের ব্যবহার বন্ধ না করলে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাবে। তাই মাছ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।

উপজেলা মৎস কর্মকর্তা রাশেদা আক্তার বলেন, নদী-নালা, খাল-বিলের মিঠা পানিতে ২৬০ প্রজাতির ও স্বাদু পানিতে ২৫৩ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এরমধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে, আর ৯ প্রজাতির মাছ অতিবিপন্ন। ৩০ প্রজাতির মাছ বিপন্ন, ২৫ প্রজাতির মাছ শংঙ্কাগ্রস্থ। দেশি প্রজাতির মাছ বিপন্ন হওয়ার পিছনে পানি দূষণসহ নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার অন্যতম। এ জালের ব্যবহার বন্ধে উপজেলা মৎস্য অফিস কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও নজরে আসলে তাৎক্ষনাৎ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তা ধ্বংস করা হচ্ছে। তবে অধিকাংশ জাল রাতে বসানো হয় বলে ধরা সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসাহাক আলী জানান, মা ও পোনা মাছ রক্ষায় মৎস্য অফিসের সাথে সমন্বয় করে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নওগাঁয় যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতন, স্বামীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতার

সিরাজগঞ্জের চৌহালীর চরাঞ্চলের মানুষের জীবন বাজি রেখে প্রতিদিন নৌ-পথে যাতায়াত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় গ্রেফতার

বেরোবি ক্যাম্পাসে ৬২ ঘণ্টা বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নছিমনের ধাক্কায় স্কুলছাত্র নিহত