প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে নতুন এক স্বপ্ন গড়ছে দেশের তরুণ সমাজ

রংপুর প্রতিনিধি : দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল রাখতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে নতুন এক স্বপ্ন গড়ছে দেশের তরুণ সমাজ। বিশেষ করে চাকরির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার বদলে, তরুণরা এখন নিজেরাই উদ্যোগ নিচ্ছেন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার। এ প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে রংপুর অঞ্চলের তরুণেরা নিজেরাই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ শিক্ষিত তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করলেও কাঙ্খিত চাকরি পান অর্ধেকেরও কম। শিল্পায়নের ধীরগতি এবং সীমিত শ্রমবাজারের কারণে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি রংপুরে।
তবে এই চিত্র বদলে দিচ্ছে রংপুর অঞ্চলের তরুণেরা। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা আর ইচ্ছাশক্তির জোরে অনেকেই নতুনভাবে পথ খুঁজে নিচ্ছেন। ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যাগ্রো-টেক কিংবা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদেরও কাজের সুযোগ তৈরি করছেন তারা।
রংপুর নগরীর শালবন এলাকার বণি চৌধুরী জানান, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে লেখাপড়া শেষ করে মায়ের কাছে ৭ হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতে বসে অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। গত দুই বছরে তার ব্যবসার পরিধি বেড়েছে। এই দুই বছরে সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ দাঁড়িয়েছে বর্তমানে অর্ধকোটি টাকা। তার এই অনলাইন কাপড়ের ব্যবসায় কর্মসংস্থান হয়েছে সাত শিক্ষিত তরুণের।
আরও পড়ুনতিনি জানান, পণ্যের গুনাগুণ, গ্রাহকদের চাহিদা আর সততার সাথে ব্যবসা করায় তিনি এই সাফল্যের মুখ দেখছে। তবে এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে নিরলস পরিশ্রম, বাজার চ্যালেঞ্জসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কথাও জানান এই উদ্যোক্তা।
রংপুর সরকারি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকমল হোসেন জানান, বেকার তরুণদের যদি বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ, মূলধন সহায়তা এবং বাজার তৈরিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া যায়, তবে তারাই হতে পারে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
গবেষণা বলছে, দেশের ১৮-৩৫ বছর বয়সী ৬২ শতাংশ তরুণই নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী। গত এক দশকে ই-কমার্স, অ্যাগ্রো-টেক ও ফ্রিল্যান্সিংসহ বিভিন্ন খাতে স্টার্টআপ বেড়েছে তিন গুণ। বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ তরুণ-তরুণী অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তরুণদের এই উদ্যোক্তা হওয়া যাত্রা টেকসই করতে হলে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ এবং দীর্ঘমেয়াদী নীতিগত সহায়তা জরুরি দরকার বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন