ঠাকুরগাঁওয়ে তিনশ’ বছরের সূর্যপুরী আমগাছ, ফলন ১৫০ মণ আম

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : বট গাছের মত বিশাল আকৃতি হলেও গাছটি আসলে বট গাছ নয়, এটি একটি আমগাছ। ৩শ’ বছরের আমগাছটি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী সীমান্তে মন্ডুমালা গ্রামে আমগাছটি প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে নয়, এই আমগাছটি এখন বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা দেশে। আর গাছটির ছড়িয়ে যাওয়া ডালপালা আর থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা আম দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা।
৩শ’ বছরের বিশাল আকৃতির গাছটি অবস্থিত ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারি এলাকায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই গাছটি দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে আজও ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ মৌসুমে গাছটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমের ফলন হওয়ায় গাছটি সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে।
প্রায় ৭৩ শতক জমি জুড়ে বিস্তৃত এ গাছটি থেকে এবার ১৫০ মণ ফলন হয়েছে বলে জানান গাছের মালিক। বর্তমান গাছটির মালিক স্থানীয় বাসিন্দা দুই ভাই সাইদুর রহমান ও নূর ইসলাম। তাদের অনুমান প্রায় আনুমানিক ৩শ’ বছর হবে গাছটির বয়স।
জানা যায়, গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট। গাছটির অদ্ভুত দিক হলো ডালগুলো। মূলকাণ্ড থেকে ডাল বেরিয়ে একটু উপরে উঠে আবারও তা মাটিতে নেমে গেছে, তারপর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উপরে উঠেছে। দেখতে অনেকটা নদীর ঢেউয়ের মতো উঁচু-নিচু। মূলকাণ্ড থেকে বেরিয়েছে ২০টির মতো শাখা। গাছটির শাখাগুলোর দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ ফুটের মতো। গাছের প্রতিটি ডালে চাইলে অনায়াসে হাঁটাচলা ও বসা যায়।
এদিকে দৃষ্টিনন্দিত আমগাছটি দেখতে দর্শনার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেেছ দর্শনার্থীরা। তবে গাছটির ভিতরে প্রবেশ করতে গুনতে হয় ২০ টাকার টিকিট। লালমনিরহাট থেকে বেড়াতে আসা হুমাইয়ুন, ফরিদ ও জব্বার বলেন, বিচিত্র এই গাছ সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছি।
আরও পড়ুনটিভিতেও দেখেছি, তবে কখনও সরাসরি দেখিনাই। এবারে এখানে এসে গল্পের সত্যতা পেয়ে বেশ ভালো লাগছে। এখানে এসে শতবর্ষী এই গাছের আমও খেলাম। আমটি বেশ সুস্বাদু। সাক্ষী হিসেবে গাছের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছি। প্রবেশ ফি ২০ টাকা নিলেও কোনো আফসোস নেই তার।
গাছটির মালিক সাইদুর রহমান বলেন, ২০২৩ সালে তিনি প্রায় দুই লাখ টাকার আম বিক্রি করেছিলেন এই গাছ থেকে। গতবছর আমের ফলন কম হয়েছিল। লাখ খানেক টাকার আম বিক্রি হয়। তবে এবার প্রচুর আম ধরেছে, আশা করছেন আগের চেয়ে বেশি টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন। এখনই সব আম পাড়বেন না। গাছপাকা আম বিক্রি করছেন।
প্রতিদিন গড়ে ৩০ কেজির ওপর আম বিক্রি হচ্ছে এখান থেকে। এবারে ১৫০ মণের মতো আমের ফলন হয়েছে। খ্যাতির কারণে গাছের আমের কদর একটু বেশি। ব্যতিক্রমী গাছের সুস্বাদু আম পেতে আগ্রহী অনেকেই। অন্যান্য আম যেখানে বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় এ গাছের আমের কেজি ১শ’ টাকা। বেশি দাম হলেও আমের স্বাদ পেতে দর্শনার্থীদের আগ্রহে কোনো কমতি নেই।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, সূর্যপুরী একটি জনপ্রিয় আমের জাত। আমটি কেবল ঠাকুরগাঁওয়েই ভালো হয়। এ কারণে জেলার পরিচিতি তুলে ধরতে সূর্যপুরী আমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন