তীব্র গরমে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার পাখাপল্লির শিল্পীরা

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি : নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর গ্রামটিতে তালগাছ না থাকলেও এখন তালপাখার গ্রাম বা পাখাপল্লি নামেই পরিচিত। বছরের ছয় মাস হাতপাখা তৈরি করে এই পল্লির কারিগররা বাড়তি উপার্জনের সুযোগ পান।
এ বছরও দাবদাহের কারণে তীব্র গরমে তালপাতার তৈরি হাতপাখার চাহিদা তুঙ্গে উঠেছে। তাই কারিগররা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। জামনগর গ্রামটির শতাধিক পরিবার পৈতৃক পেশা তালপাতার হাতপাখা তৈরি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কারিগররা জানান, এর প্রধান কাঁচামাল ডাগুরসহ তালপাতা। উত্তরের জেলা নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তালপাতা কিনে আনতে হয় পৌষ মাসের শুরুতে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এ পল্লির প্রতি বাড়ির আঙিনায় রৌদ্রে ছড়ানো-ছিটানো তালপাখা বানানোর নানা উপকরণ। প্রতিটি বাড়ির নারী-পুরুষ পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত। পুরুষরা সংগৃহীত তালপাতা কেটে পাখার আকার করছেন। মেয়ে শিল্পীরা নিপুণ হাতে পাখায় বিভিন্ন কারুকার্য করছেন। সব বাড়িতেই তালপাতার তৈরি হাতপাখাগুলো শোভা পাচ্ছে।
জানা যায়, প্রতি গ্রীষ্ম মৌসুমে এ পল্লি থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের তালপাতার তৈরি হাতপাখা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এই পল্লির পাখা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ থেকে ছোট তালগাছের পাতা সংগ্রহ করা হয়। কিছুদিন পর ভেজা নরম পাতা গোলাকার করে কেটে মাঝখান দিয়ে দুই খন্ড করা হয়।
আরও পড়ুনপ্রতি পাতা থেকে দুটি পাখা তৈরি করা হয়। পাতা সংগ্রহসহ প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা। এগুলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়। বর্তমানে প্রতিটি তালপাতার হাতপাখার পাইকারি মূল্য ২২ থেকে ২৫ টাকা। পল্লির ষাটোর্ধ্ব আরেক নারী কারিগর মিনারা বেগম জানান, তিনি প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ হাতপাখার কারুকার্য করেন। প্রতি ১০০ পাখা তৈরির গড় মজুরি ১০০ টাকা পান।
জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘হাঁপানিয়া পাখাপল্লীর নারী-পুরুষরা খুব পরিশ্রমী। তারা পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট। প্রচন্ড গরমে তালপাতার তৈরি হাতপাখার চাহিদা বেশি থাকায় পাখাশিল্পের কারিগররা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই পল্লির শিল্পীদের নিপুণ হাতে তৈরি হাতপাখার দেশব্যাপী চাহিদা রয়েছে।’
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, এই পুরানো ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাদের যদি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তবে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করলে তাদের কথা শুনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
মন্তব্য করুন