বাংলাদেশকে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বায়ুমানের উন্নয়নে দুটি বড় প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। বুধবার (১৮ জুন) সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ এই অর্থায়নের অনুমোদন দেয়।বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পরিষ্কার বায়ু অপরিহার্য। এই প্রকল্পগুলো কর্মসংস্থান বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।’
প্রথম প্রকল্প ‘এনার্জি সেক্টর সিকিউরিটি এনহান্সমেন্ট’-এর আওতায় পেট্রোবাংলার জন্য সাশ্রয়ী অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হবে। এতে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের আইডিএ গ্যারান্টির মাধ্যমে সাত বছরে ২.১ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি বিনিয়োগ টানার সুযোগ তৈরি হবে, যা ব্যবহার হবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে। বর্তমানে দেশের মোট গ্যাস ব্যবহারের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে, যার ৪২ শতাংশ ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এই প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানিতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং কার্যকর পেমেন্ট ব্যবস্থাও চালু করবে। বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্পটির টিম লিডার ওলায়িনকা এডেবিরি বলেন, ‘এই উদ্যোগ শিল্প ও জনগণের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়ক হবে, যা দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
দ্বিতীয় প্রকল্প ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’-এর মাধ্যমে ২৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা, আধুনিক মনিটরিং স্টেশন স্থাপন এবং যানবাহন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বায়ু দূষণের ফলে বাংলাদেশে ১ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি অকাল মৃত্যু এবং ২.৫ বিলিয়ন কর্মদিবস হারানোর মতো ক্ষতি হয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮.৩ শতাংশের সমান। এই প্রকল্পের আওতায় পুরনো ৪০০টি ডিজেলচালিত বাস সরিয়ে ইলেকট্রিক বাস চালু করা হবে। এছাড়া নির্মাণ করা হবে পাঁচটি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র, আধুনিকীকরণ করা হবে দুটি পুরনো কেন্দ্র, এবং ২০টি মোবাইল ভেহিকেল এমিশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বছরে প্রায় ২,৭৩৪ মেট্রিক টন পিএম ২.৫ নির্গমন হ্রাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের লিড এনভায়রনমেন্ট স্পেশালিস্ট ও প্রকল্পটির টিম লিডার আনা লুইসা গোমেস লিমা বলেন, ‘এটি বায়ুমান উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রথম বড় উদ্যোগ। যেহেতু বাতাস সীমানা মানে না, তাই এই প্রকল্প আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং তথ্য বিনিময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
আরও পড়ুনউল্লেখ্য, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। এখন পর্যন্ত সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ আইডিএ’র বৃহত্তম অর্থ সহায়তা প্রাপক দেশগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন