সরকারি দর ১৪৪০ টাকা
বগুড়ার কন্দাল ফসল গবেষণা উপ-কেন্দ্রের ২শ’ মণ ধান মাত্র ৬শ’ টাকা দরে বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার সেউজগাড়ীস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র কন্দাল ফসল গবেষণা উপ-কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রায় ২শ’ মণ ধান ৬শ’ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাখ টাকার বেশি ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র কন্দাল ফসল গবেষণা উপ-কেন্দ্রে কন্দাল জাতীয় ফসল নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। কন্দাল জাতীয় ফসল নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি মৌসুমি ফসল উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ফসল কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি দাম ধরে বিক্রি করা হয়।
আলু, কচু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ফসল ছাড়াও এই ইনস্টিটিউটের গাছে উৎপাদিত আম, ডাব ইত্যাদি ফসল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় উৎপাদিত ধানও বিক্রি করা হয়। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে প্রতিষ্ঠানটি সাতটি ব্লকে ধান চাষ করে। সাতটি ব্লক থেকে প্রায় ২শ’ মণ ধান উৎপন্ন হয়। এই ধান একটি কমিটির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বিক্রি করা হয়।
এজন্য একটি দামও নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত দামে ধান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ করে তা বেশি দামে বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বাজার মূল্যে বিক্রি করে লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র কন্দাল ফসল গবেষণা উপ-কেন্দ্রের একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সাতটি ব্লকে প্রায় ২শ’ মণ ধান উৎপাদন হয়। এই ধান ৬শ’ টাকা মণ দরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ ২৩ থেকে ২৮ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. নাজমুল হক দৈনিক করতোয়া’কে জানান, জমি লিজ নিয়ে ধান উৎপাদন করলে প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ ২৭ থেকে ২৮ টাকা এবং নিজ জমি হলে এর উৎপাদন খরচ ২৩ টাকার মতো হয়।
সর্বনিম্ন উৎপাদন খরচ ২৩ টাকা ধরলেও প্রতি মণে ৩২০ টাকা লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করা হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে। এদিকে সরকার এবছর খাদ্যগুদামে ধান কিনছে ১৪৪০ টাকা মণ দরে। সে অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে প্রতিমণ ধান ৮৪০ টাকা কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৬শ’ টাকা মণ দরে ধান কিনে ওই প্রতিষ্ঠানেই ব্যবসায়ী ডেকে বিক্রি করছে দ্বিগুণ দামে।
আরও পড়ুনকন্দাল ফসল গবেষণা উপ-কেন্দ্র বগুড়ার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ধান বিক্রয় ও বিতরণ কমিটির প্রধান মোসা. আরজুমান আখতার জানান, তিনি ইনচার্জের নির্দেশনায় ধানগুলো বিক্রি করেছেন ৬শ’ টাকা মণ দরে। তিনি জানান, এই প্রতিষ্ঠানের ৬৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যেকের জন্য তিন মণ করে ধান বরাদ্দ করা হয়। সে অনুযায়ী ১৮৯ মণ ধান বিক্রি করা হয়েছে।
ধানের ক্রেতা বুলু মিয়া দৈনিক করতোয়া’কে জানান, তিনি কন্দাল ফসল গবেষণা উপ-কেন্দ্রে থেকে ১৪০ মণ ধান কিনেছেন ১২শ’ টাকা মণ দরে। ধান বিক্রির দায়িত্বে থাকা আরেক জন হলেন আফ্রিন জাহান। তিনি জানান, এর মধ্যে এক ব্যবসায়ী নিয়েছেন ১৪০ মণ, অন্য ব্যবসায়ী নিয়েছেন ৪৯ মণ।
বাজারে ধানের দাম বেশি হলেও কেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করা হচ্ছে এ প্রসঙ্গে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইনচার্জ তৌহিদুর রহমান জানান, আগে ধানের দাম নির্ধারণ করা ছিল ১৩ টাকা কেজি, এবার দুই টাকা বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেজি করা হয়েছে। তিনি বলেন, দাম নির্ধারণ করা জন্য কমিটি করা আছে। সেই কমিটি দাম নির্ধারণ এবং বিক্রি করেন।
অন্যদিকে বিক্রয় ও বিপণন কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ইনচার্জ যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেই দামে বিক্রি করা হয়েছে। উৎপাদন খরচ ২৩ টাকা এবং বিক্রি করা হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচের চেয়ে ৮ টাকা কমে বিক্রি করায় সরকারের লোকসান হচ্ছে ৬০ হাজার টাকার বেশি।
অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাগবাটোয়ারা করেছেন কয়েক লাখ টাকা। এই ধান সরকারের খাদ্য বিভাগে বিক্রি করা হলে দুই লাখ ৭২ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হতো। আর ৬শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করায় সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ১ লাখ ১৩ হাজার ৪শ’ টাকা।
মন্তব্য করুন