আবারো করোনার হানা: বগুড়ায় দুটি সরকারি হাসপাতালে ৬০ শয্যা প্রস্তুত, কীটের চাহিদা পাঠানো হয়েছে দশ হাজার

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে আবারো দেখা দিয়েছে করোনার প্রাদুর্ভাব। দেশে বেশ কিছু করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেইসাথে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন মারাও গেছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশই ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর এলাকার। তবে বগুড়ায় করোনা পরিস্থিতি আপাতত: ভালো। বগুড়ায় এখনো করোনা হানা দেয়নি।
বগুড়ার সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এদিকে বগুড়া শহরের দুটি সরকারি হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে করোনার জন্য ৫০ শয্যা তৈরি করে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ শয্যা এবং ৪০টি সাধারণ শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৬টি আইসিইউ এবং ৪টি সাধারণ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া শজিমেক হাসপাতালের জন্য ৫ হাজার এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জন্য ৫ হাজার কীটের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মজিদুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালে কোভিডের সময় ওই হাসপাতালকে করোনার জন্য বিশেষায়িত করা হয়েছিলো। সে সময় করোনায় আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য ১০ শয্যার যে আইসিইউ কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছিলো, এবারও ওই কক্ষকেই করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ওই কক্ষে ১০টি শয্যার মধ্যে ৬টি আইসিইউ এবং ৪টি সাধারণ শয্যা। যদি রোগী বাড়ে সেক্ষেত্রে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া রোগীদের শনাক্ত করার জন্য ৫ হাজার কীটের চাহিদা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা.আব্দুল ওয়াদুদ জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ৫০ শয্যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ১০টি আইসিইউ এবং ৪০টি সাধারণ শয্যা।
শজিমেকের অধ্যক্ষ ডা. ওয়াদুদুর রহমান তরফদার নাহিদ জানান, করোনা শনাক্তের জন্য বর্তমানে কলেজের ল্যাবে মাত্র ২৫টি কীট রয়েছে। আরটিপিসিআর মেশিন সচল থাকলেও মেশিন চালানোর লোকবল নেই। ৫ বছর আগে করোনার সময় যারা অস্থায়ীভাবে যারা কাজ করতেন তারা এখন নেই। কেউ তো জানতো না যে আবারো করোনা ফিরে আসবে। তবে বুধবার আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে জুম মিটিং করেছি। আমাদের জরুরী ভিত্তিতে কীট কিনতে বলা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে লোকবল ও ৫ হাজার কীট চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি।
বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোফাখখারুল ইসলাম জানান, জেলার কোথাও এখনও কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। জেলা থেকে উপজেলা সব হাসপাতালে করোনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এখনই আমাদের আতংকিত হওয়ার মত কিছু হয়নি। যেহেতু করোনার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আরও পড়ুনকোভিড-১৯ এর এই নতুন উপধরন অমিক্রন এক্সবিবি নামে দ্রুত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বলা হচ্ছে, এই রূপটি পূর্ববর্তী রূপগুলোর তুলনায় বেশি সংক্রামক। অনেক ক্ষেত্রে এটি সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ করে না, কিন্তু ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অমিক্রন এক্সবিবি হলো একটি রিকম্বিন্যান্ট সাবভেরিয়েন্ট, যা দুটি অমিক্রন স্ট্রেনের সংমিশ্রণে গঠিত।
উপধরনটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে-পূর্ববর্তী রূপগুলোর তুলনায় দ্রুত ছড়াতে পারে। কখনো কখনো প্রচলিত পরীক্ষায় ধরা পড়ে না, মানে ফলস নেগেটিভ টেস্ট আসে। ক্ল্যাসিক্যাল লক্ষণ বা উপসর্গ নাও হতে পারে।
যেভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে: অনেক রোগীর কাশি বা জ্বরের মতো সাধারণ লক্ষণ দেখা যায় না। পরিবর্তে গিঁটে ব্যথা, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস, হালকা থেকে মাঝারি শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই নাকের সোয়াব পরীক্ষা করে এই উপধরনের ভাইরাস পাওয়া যায় না। তবে বুকের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যানের মতো ইমেজিং পরীক্ষায় ফুসফুসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
করোনার নতুন এই রূপের তথ্য-উপাত্ত বলছে, যদিও অমিক্রন এক্সবিবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তবু এটি উচ্চ মৃত্যুহারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে বয়স্ক ব্যক্তি, দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি, অথবা দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে (যেমন ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ) এমন ব্যক্তিরা গুরুতর জটিলতার মুখোমুখি হতে পারেন।
মন্তব্য করুন