ডিজিটাল জরিপের দাবি ভুক্তভোগীদের
বগুড়ায় দীর্ঘ ৪০ বছরেও ভূমি জরিপ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ভূমি মালিকদের দুর্ভোগ চরমে

স্টাফ রিপোর্টার : উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বগুড়ার ভূমি জরিপ কার্যক্রমে। দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হলেও দীর্ঘ ৪০ বছর আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বগুড়া অঞ্চলে (বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা) শুরু হওয়া ভূমি জরিপ কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। ভূমি জরিপ কার্যক্রমে নানা রকমের ভুল ভ্রান্তি ও ত্রুটি থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে বগুড়ার ভূমির মালিকরা।
জরিপে নকশার সাথে পর্চার অমিল, দাগ নম্বরের ভুল, একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড হওয়ার ফলে সংশোধনের জন্য ভূমি মালিকদের ধর্না দিতে হয় সেটেলমেন্ট অফিসে। এসব ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী জমির মালিকরা।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কোশাস গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছিলে ভুক্তভোগী ভূমি মালিক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন গত ২০২২ সালের আগস্ট মাসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বগুড়ায় ভূমির জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন দীর্ঘ ৪০ বছর আগে ১৯৮৫ সালে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বগুড়ায় ভূমির জরিপ কার্যক্রম শুরু হলেও তা এখনো পর্যন্ত শেষ হয়নি।
বগুড়া অঞ্চলের ভূমি সেবা যুগোপযোগী করণের জন্য মৌজাগুলো ডিজিটাল জরিপের আওতায় নিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়। বগুড়া সদরের মালগ্রাম এলাকার আব্দুল মতিন এর ছেলে মোঃ আব্দুল বাতেন ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর মালগ্রাম মৌজা কে ডিজিটাল সার্ভে করার আবেদন জানান। আবেদন পত্রে তিনি উল্লেখ করেন ৪০ বছর আগে শুরু হওয়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে জরিপ কার্যক্রম আজও শেষ হয়নি।
দীর্ঘ সময়ের মাঝে স্বাভাবিক ভূমিগুলো উন্নয়নের ফলে ফসলি জমি, পুকুর ও গাছপালার ঝোপ-ঝাড়গুলোতে সুউচ্চ ইমারত নির্মিত হয়েছে। বিগত ৪০ বছর আগের নকশার সাথে বর্তমান নকশার ৮০ ভাগ কোন মিল নেই। ওই রেকর্ডে আগের জমির শ্রেণি মুদ্রণ হলে সরকার প্রচুর টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। উক্ত বিষয়ে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার মো: মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করলে হাইকোর্ট ডিভিশন গত ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর একটি আদেশ দেন।
ওই আদেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে, আইনানুগ সিদ্ধান্ত নিতে বলেন হাইকোর্ট। তারপরেও উক্ত মালগ্রাম মৌজার প্রায় ৫৫ বিঘা জমির একটি বাটোয়ারা মামলায় ৮০/৫৮ ডিগ্রীপ্রাপ্তদের নামে কোন রেকর্ড করা হয়নি। এ কারণে বগুড়া জোনাল অফিসে প্রায় ২শ’র বেশি ৪২ ধারায় ভুয়া ও ভুল রেকর্ড সংশোধন করার আবেদন পড়েছে। তাছাড়া উক্ত ভুল রেকর্ডগুলো সংশোধন করার জন্য উক্ত মৌজা নিয়ে হাইকোর্টে দুইটি রিট মামলা চলমান রয়েছে।
এই মৌজায় ভুল প্রিন্ট ও গেজেট প্রকাশ হলে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে আরও হাজার হাজার মামলার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণে পূর্বের শুরু হওয়া রেকর্ড শ্রেণী নকশা বাতিল করে ডিজিটাল জরিপের আওতায় আনার অনুরোধ জানানো হয়।
আরও পড়ুনবগুড়া জোনাল সেটেলমেন্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার ১২টি উপজেলা ও জয়পুরহাটের ৫টি উপজেলা মিলে বগুড়া সেটেলমেন্ট’ জোনের আওতায় ১৯৮৫ সালে ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়। এ অঞ্চলে ২৪৮৯ মৌজায় খতিয়ানের সংখ্যা ২৫ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ টি। দীর্ঘ সময় ধরে ভূমি জরিপ কার্যক্রম চলাকালে নানা জটিলতায় ৭টি মৌজার সকল স্তরের কাজ বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া পুনরায় জরিপের জন্য ৫টি মৌজার জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলমান জরিপ কার্যক্রমে ৮৪ মৌজার মধ্যে ধুনট উপজেলার জনসাধারণের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২টি মৌজা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পুনরায় জরিপের জন্য অধিদপ্তর হতে নির্দেশনা পাওয়া গেছে। তবে কার্যাদেশ ও আর্থিক মঞ্জুরী পাওয়া যায়নি। সারিয়াকান্দি উপজেলার ২টি মৌজা যথাক্রমে চর মানিকদাইর ও পাকেরদহ মৌজার তসদিকোত্তর যাঁচ কাজ স্থগিত রয়েছে।
ধুনট উপজেলার চৌবেড় মৌজার পুনরায় ডিজিটাল জরিপের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপত্তি কাজ সাময়িক ভাবে স্থগিত আছে। আপত্তি পেন্ডিং রয়েছে ৪২ টি। বগুড়া সদরের চুড়ান্ত যাঁচ স্তরে হয়েছে ২টি মৌজা ও শেরপুর উপজেলার একটি মৌজা। ফেয়ার কফি স্তরে অনলাইনে ১৫ টি মৌজার মিসটেক পাস ও চেক চলছে। চূড়ান্ত প্রকাশনা স্তরে ২২টির মধ্যে ১টি স্থগিত, ৫টি চলমান এবং ১৬ টি মৌজা প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া গেজেট প্রস্তাব প্রেরনের অপেক্ষায় ১১ টি মৌজার মুদ্রণ জনিত ত্রুটি সংশোধনের জন্য মিসকেস রুজু হয়েছে এবং সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।
সর্বশেষ বগুড়া ও জয়পুরহাটের ১৭ টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার বিভিন্ন স্তরের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া উপজেলাগুলোর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলা ২০২৪ সালের জুন মাসে, পাঁচবিবি উপজেলা গত ২০২০ সালের আগস্ট মাসে, ক্ষেতলাল উপজেলা ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে, নন্দীগ্রাম উপজেলা একই বছরের জুন মাসে, দুপচাঁচিয়া উপজেলা অক্টোবর মাসে এবং সোনাতলা উপজেলার কাজ ওই বছরের নভেম্বর মাসে সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে বগুড়া যোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের চার্জ অফিসার মোছা: রওনক জাহান দৈনিক করতোয়া’কে বলেন, ভূমি জরিপ কাজে দীর্ঘ দিনের অগোছালো ও অনিয়ম আমরা চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধান প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই জরিপ কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
এ ছাড়া বগুড়ার কয়েকটি উপজেলার কিছু মৌজা ডিজিটাল জরিপের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কয়েকটি মৌজার অনুমোদনও পাওয়া গেছে। তবে মঞ্জুরী না পাওয়ায় ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন