ওএসডির পরও দায়িত্বে থাকায় কুসিক প্রধান নির্বাহীকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত

নিউজ ডেস্ক: বদলির আদেশের পরও দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মো. সামছুল আলমকে তার বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত করা হয়েছে।
সোমবার (১২ মে) তারিখে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রফিকুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মো. সামছুল আলমকে পূর্বে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে পদায়ন করা হলেও তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেখানে যোগ দেননি।
ফলে জনস্বার্থে তাকে কুসিকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল রাতে কুসিক সূত্রে জানা যায়, মো. সামছুল আলমকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) হিসেবে নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মিয়া মোহাম্মদ আশরাফ রেজা সিদ্দিকীর স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তার বদলির আদেশ জারি করা হয়েছিল।
এই আদেশের পরও তিনি কুসিক কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। অবশেষে ১২মে তাকে তাৎক্ষণিক অবমুক্তির নির্দেশনা দিয়ে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
আরও পড়ুনকুসিক সূত্র ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. সামছুল আলমের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কুসিকের উন্নয়ন প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ভাতা-ভবিষ্যত তহবিলে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া কুমিল্লা অঞ্চলে তার দীর্ঘ দিনের প্রভাব বিস্তার নিয়েও স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তিনি এক যুগেরও বেশি সময় কুমিল্লার বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, কুসিকের কিছু ঠিকাদার, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি নিজের প্রশাসনিক অবস্থানকে ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিস্বার্থে।
কুসিক ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তার ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষতা বজায় না রেখে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগে তিনি আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন। ওই সময় তাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশও দেওয়া হয়।
একটি সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তিনি অভিযোগকারীর মুখোমুখি হয়ে অসদাচরণ করেন বলেও একটি লিখিত অভিযোগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে, যা তদন্তাধীন রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বারবার একই ধরনের অভিযোগ আসা এবং তা তদন্তের পর্যায়ে পৌঁছানো প্রশাসনের জন্য অস্বস্তিকর। সেক্ষেত্রে তাকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া বিকল্প থাকে না।’’
তিনি আরও বলেন, “কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি নতুন কর্মস্থলে যোগ না দেন, তাহলে সেটিও প্রশাসনিক শৃঙ্খলার লঙ্ঘন। এতে প্রমাণ হয়, ওই কর্মকর্তা চাপে পড়েছেন অথবা দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন। তাই তাকে অবিলম্বে অবমুক্ত করা হয়েছে।”
মন্তব্য করুন