ভিডিও বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫

হিমাগারে জায়গা নেই, বাজারে দাম নেই আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক

হিমাগারে জায়গা নেই, বাজারে দাম নেই আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক। ছবি : দৈনিক করতোয়া

জয়পুরহাট প্রতিনিধি : হিমাগারে জায়গা না থাকায় এবার জেলার অধিকাংশ কৃষকরা দাম বেশির আশায় বাড়ির উঠান ও বৈঠকখানায় শ’ শ’ মণ আলু সংরক্ষণ করেছে। কিন্তু মৌসুমের দুই মাস পরও আলুর দাম পাচ্ছেন না কৃষক। দিন যতই যাচ্ছে দাম ততই কমছে।

অন্যদিকে আবহাওয়া তারতম্যের কারণে সংরক্ষণ করা আলুতে পচন ধরার পাশাপাশি ব্যাপকহারে পোকার আক্রমন বেড়েছে। ফলে এসব আলু কিনতেও চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। দাম না থাকায় আলুতে এবার লোকসান গুনছেন কৃষকরা। এ অবস্থায় আলু নিয়ে চরম দুরাবস্থায় দিন কাটছে কৃষকদের।

মৌসুমের শুরুতে এবার প্রতি মণ আলুর দাম ছিল জাত ভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। দুই মাস পর বর্তমানে সেই আলু জেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকায়। তাও ভালো মানের আলু। পোকা বা পচাঁ আলু দেখলে ব্যবসায়ীরা দামই করছেন না।

অথচ গত বছর এ সময় প্রতি মণ আলু বিক্রি হয়েছে কম পক্ষে দেড় হাজার টাকায়। গত বছর আলুতে লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় এবার ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর বেশি। আবহাওয়া ভালো থাকায় জেলায় এবার আলু উৎপাদন সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন। তবে আলুর বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে  ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম ভালো ছিল।

বিভিন্ন জাতের প্রতি মণ আলু তখন বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে। এতে তুলনামূলক লাভ কম হওয়ায় বেশি লাভের আশায় কৃষকরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু লাভ বেশি পেয়ে এবার অধিকাংশ হিমাগারের ব্যবসায়ীরা আগে ভাগে আলু মজুত করে। জেলার ২১টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন।

হিমাগারে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় কৃষকরা বেশি দামের আশায় বাড়ির উঠান, খুলি ও বৈঠকখানায় শ’ শ’ মণ আলু খড় দিয়ে ঢেকে রাখে। কিন্তু দুই মাস পরও সেই আলু বিক্রি করতে গিয়ে দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। বর্তমানে অ্যাস্টেরিক ও ডায়মন্ড জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা মণ দরে। আর দেশি লালগুটির প্যাকরি জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা মণ দরে।

আরও পড়ুন

দাম না থাকায় বাজারে আলু বিক্রি করতে এসে কৃষকদের পোহাতে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনা। কম দামে আলু বিক্রি করে কৃষকদের বিঘা প্রতি লোকসান হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় দুদর্শা লাঘবে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু বিদেশে রপ্তানী করার দাবি জানান কৃষকরা।

ক্ষেতলাল উপজেলার তারাকুল গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, এবার ৯ বিঘা জমিতে আলু চাষে তার খরচ হয়েছে ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা। আলু বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বাঁকি টাকা তার লোকসান হয়েছে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার খাসপাহনন্দা গ্রামের কৃষক হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘১০০ টাকা কেজি আলুর বীজ কিনে ৩০০ টাকা মণ আলু বিক্রি করছি। চার বিঘা জমির আলু বিক্রি করেছি মাত্র ১৮ হাজার টাকায়। অথচ আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।  

দাম কমের কারণে চাহিদা না থাকায় কৃষকদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে নতুন হাটের আলু ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা বাড়িতে শ’ শ’ মণ আলু খোলা আকাশের নিচে মজুত করেন। আবহাওয়া স্থিতিশীল না হওয়ায় ব্যাপকহারে আলু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পচনের পাশাপাশি পোকা ধরছে। বাছাই না করেই কৃষকরা সেই আলু বিক্রি করে আমাদের বিপদে ফেলছেন। আমরা মোকামে আলু পাঠালে খারাপ আলুর জন্য মহাজনরা রিপোর্ট করছেন’।

আলু নিয়ে এমন বিড়ম্বনা ও লোকসান ঠেকাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু বিদেশে রপ্তানি করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। পাশাপাশি আলু বীজের দামও নিয়ন্ত্রণেরও দাবি জানান তারা। জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো: মেহেদী হাসান বলেন, ‘চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণেই আলুর বাজার কমে গেছে। বাজার সংযোগের মাধ্যমে আলুর নায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিরাজগঞ্জে বিষাক্ত এ্যালকোহল পানে দুইজনের মৃত্যু

হাসিনার পর এবার টিউলিপকে দুদক’র তলব

বাবাকে কুপিয়ে হত্যার পর ৯৯৯-এ ফোন মেয়ের

এটিএম আজহারের আপিলের রায় ২৭ মে

সাম্প্রতিক সময়ের মামলা নিয়ে যা বললেন সারজিস

এবার লাহোরে ভারতীয় ড্রোন ধ্বংস করলো পাকিস্তান