সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে ওসিসহ ১৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পুলিশ হেফাজতে রেখে ট্রাক ড্রাইভার রোকন মোল্লাকে (৩৬) নির্যাতনের অভিযোগে উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম, সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী রোকন মোল্লা বাদি হয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। রোকন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নেছরাপাড়া গ্রামের রহমত মোল্লার ছেলে। দুই ওসি ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন-সলঙ্গা থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ তাজউদ্দিন আহমেদ, উল্লাপাড়া থানার সাবেক সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুস ছালাম, সলঙ্গা থানা সাব-ইন্সপেক্টর মুনসুর রহমান, সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুল কুদ্দুস। এছাড়া মামলায় ৯জন অজ্ঞাত পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ মে ট্রাকচালক রোকন মোল্লা বগুড়া থেকে পাবনা যাওয়ার পথে রাত ১টার দিকে বগুড়া-পাবনা মহাসড়কের কাওয়াক মোড়ে উল্লাপাড়া মডেল থানা পুলিশের ডিউটিরত পিকআপের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম ড্রাইভার রোকন মোল্লার দিকে রিভলভার তাক করেন।
ট্রাক চালক ভয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে সিরাজগঞ্জ রোডের দিকে দ্রুত ছুটতে থাকলে পুলিশের গাড়িও পিছু ধাওয়া করে। পরে খবর পেয়ে সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক ওই ট্রাকটি ধরতে পিছু নেন। এরপর সলঙ্গা থানা এলাকার রাজশাহী-পাবনা মহাসড়কের হরিণচড়ায় ট্রাক চালক রোকন মোল্লাকে আটক করে পুলিশ। তারা তাকে বেধড়ক মারধর করে বিবস্ত্র অবস্থায় রাস্তার পাশের পুকুরে নামিয়ে নির্যাতন করে। পরে পুকুর থেকে তুলে রোকনের ডান পায়ে গুলি করে ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম।
এরপর সলঙ্গা থানায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোকনকে সিরাজগঞ্জ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে তার অবস্থা খারাপ হাওয়ায় তাকে ঢাকা অর্থোপেডিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রোকনের ডান পা কেটে ফেলে ডাক্তাররা। পঙ্গু অবস্থায় অনেকদিন জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে এসে মামলা করেন রোকন মোল্লা।
আরও পড়ুনবাদি রোকন মোল্লা জানান, উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম তার পায়ে অন্যায়ভাবে গুলি করে তাকে পঙ্গু করে দিয়েছেন। তার ওপর নিদারুণ অত্যাচার করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগের মামলায় তাকে দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়েছে। তিনি সম্প্রতি জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসার পর আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি তার প্রতি অন্যায়ের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে মামলা দাখিলকারী আইনজীবী গোলাম হাদী কিরণ ইসলাম জানান, বাদির মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আমলি আদালত মামলাটি সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপারকে রুজু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রোকন মোল্লার বিরুদ্ধে ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছয় জেলায় মোট ২৮টি মামলা রয়েছে। ওই দিন ডাকাতির ঘটনায় তাকে ধরতে পায়ে গুলি করতে হয়।
তিনি এসব মামলা থেকে বাঁচার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। আদালতের নির্দেশ অনুয়ায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন