৫ আগস্টে আশুলিয়ায় নিখোঁজ মিলন বাড়ি আসবে বলে অপেক্ষায় মা মেরিনা ও স্ত্রী সবিতা

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : এখনও খোঁজ মেলেনি গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিখোঁজ বগুড়া সারিয়াকান্দি ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের মনিরুজ্জামান মিলনের (৩০)। ১১ মাসের শিশুকে নিয়ে বিপাকে মিলনের অসুস্থ স্ত্রী। এখনও পথ চেয়ে থাকেন নিখোঁজ মিলনের মা। তার নাম জুলাই বিপ্লবে শহিদ বা নিখোঁজের তালিকাভুক্ত করার দাবি করেছে পরিবার।
মিলনের মা মেরিনা বেগম (৬৫) এখনও মিলনের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদেন। বারবার বাড়ির সামনে রাস্তায় গিয়ে পথপানে চেয়ে থাকেন কখন ছেলে ফিরবে। গত ৫ আগস্টের পরে থেকেই তিনি ছেলের জন্য পথপানে চেয়ে আছেন। নিখোঁজের পর থেকেই অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও তার খোঁজ মিলছে না। মেরিনা বেগম কখনও মনে করেন, ছেলে হয়তো গুলি খেয়ে মারাই গেছে।
কোথাও হয়তো তার লাশ গুম করা হয়েছে অথবা কোনও গণকবরে মাটি দেওয়া হয়েছে। ছেলেকে শেষ বিদায় জানানোরও ভাগ্য হয়নি তার। সর্বশেষ ৫ আগস্ট যোহরের আযানের পর মিলনের সাথে কথা হয় তার। মিলন মায়ের খাওয়ার খোঁজ নিয়ে মায়ের কাছে মিছিলে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু মেরিনা বেগম ছেলেকে মিছিলে যেতে বারণ করেছিলেন।
মিলনের বড়ভাই শিক্ষক মিল্টন মিয়া জানান, সংবাদ পেয়ে গত ৬ আগস্ট তিনি ঢাকায় যান নিখোঁজ ভাইয়ের খোঁজে। সেদিন সকালে কাভার্ডভ্যানে আশুলিয়া থানার সামনে ফুটওভার ব্রিজের নিচে তিনি ৬টি লাশ দেখতে পান। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে তার ভাই ছিল না। এরপর সারাদিন তিনি আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন হাসপাতাল, থানা এবং ক্লিনিকে খোঁজ নিয়েও মিলনের দেখা পাননি।
পরের দিন ৭ আগস্ট ঢামেকে ২৬টি, পিজিতে দু’টি, সোহরাওয়ার্দীতে চারটিসহ বেশকিছু এলাকায় অনেক লাশ দেখেও মিলনের খোঁজ পাননি। এরপর সেখানে তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন এবং তার বেশকিছু টাকা খোয়া যায়। পরের দিন চীন মৈত্রী হাসপাতাল, ঢাকাসহ বেশকিছু হাসপাতালে অনেক লাশ দেখেও তার ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে তিনি নিরাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।
পরে সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৮ আগস্ট তিনি ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে ১৯টি লাশের মধ্যেও তার ভাইয়ের লাশ খুঁজে পাননি। এরপর আবারও তিনি প্রতারণার শিকার হন এবং তার বেশকিছু টাকা খোয়া যায়। ছোট ভাইয়ের সন্ধানে আশুলিয়া থানায় মিসিং ডায়েরি করা হলেও প্রশাসন কোনও তথ্য দিতে পারেনি।
নিখোঁজ মনিরুজ্জামান মিলন ঢাকা ইপিজেডের ফোর ইয়াং ডায়িং নামের একটি পোশাক শিল্পের মেকানিক বিভাগে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জানা গেছে, মিলন ঢাকা জেলার সাভারের আশুলিয়া এলাকা থেকে গত ৫ আগস্ট নিখোঁজ হন।
আরও পড়ুনওইদিন কয়েকজন বন্ধু ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে আনন্দ মিছিলে যোগ দেন মিলন। মিছিলে মিলন মিছিলকারীদের পানি দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। এরপর থেকে বন্ধু-বান্ধব ও নিকট আত্মীয়ের বাসা বাড়িতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মিলনের স্ত্রী সবিতা বেগম (২৪) জানান, গত ৫ আগস্ট সর্বশেষ সকাল ১১টায় তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় এবং সেখানে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার কথাও জানান তার স্বামী মিলন। এরপর আর তার সাথে কোনও যোগাযোগ হয়নি।
ঐদিন বিকেলে জানতে পারেন মিলনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ১৪ মাসের একমাত্র কন্যা সন্তান মারজিয়া মারিয়মকে লালন-পালন ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সবিতা খাতুন।
ভেলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শিপন জানান, নিখোঁজের তিন মাস পার হলেও আজও তার সন্ধান পাননি মিলনের পরিবার। স্বামীর সন্ধানে একমাত্র ১৪ মাসের কন্যাশিশুকে নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী সবিতা খাতুন ও তার পরিবার। নিখোঁজ মিলনের পরিবারকে ছাত্র-জনতা বিপ্লবে নিহত বা নিখোঁজ পরিবারের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা যায় কিনা সে বিষয়ে তিনি অন্তর্বতীকালীন সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার রহমান বলেন, নিখোঁজ মিলনের পরিবারকে সরকারি প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে এবং তার পরিবারকে সরকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করতে প্রচেষ্টা চালানো হবে।
মন্তব্য করুন