পিরোজপুরে বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানো সেই প্রধান শিক্ষিকা সাময়িক বরখাস্ত

পিরোজপুরের নেছারাবাদে বলদিয়া ইউনিয়নের সোনারঘোপ রমেশচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানো সেই প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াছমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাকে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়।
নেছারাবাদ শিক্ষা অফিসের শিক্ষা কর্মকর্তা খোন্দকার জসিম আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে (শামীমা ইয়াছমিন) চিঠির মাধ্যমে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন।’ কী কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, প্রশ্ন করে পুনরায় জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অফিসের মেইলে বরখাস্তের আদেশ এসেছে। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে ফোনে আমাকে জানানো হয়েছে। তবে অফিস টাইমে চিঠি পড়ে জানতে পারবো। এর আগে কারণ না জেনে বলা যাবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই শিক্ষিকার স্বামী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলেছে আপনার একটা চিঠি আছে। অফিসে এসে নিয়ে যাবেন। তবে চাকরি থেকে বরখাস্তের বিষয়ে আমাদের কিছু বলেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানোর কোনও সরকারি নির্দেশনা ছিল না বলে আমার স্ত্রী ছবি নামায়নি। পরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দেয়াল থেকে ছবি নামাতে বলেছেন বিধায় বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানো হয়েছে। এখন এতে যদি আমার স্ত্রীর সমস্যা হয় তাতে আমার কোনও সমস্যা নেই। এমন কোনও পরিস্থিতি হয়নি যে আমার স্ত্রীর চাকরি যাবে। ছবিটি না নামানোতে যদি চাকরি যায়, তাহলে দেশে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে—তা বোঝা যায়।’
আরও পড়ুনহাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার একটা ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করে। বড় ছেলে একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। আমি গত এক বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছি। আমার স্ত্রীর চাকরি বয়স চব্বিশ বছর পূর্ণ হয়েছে। আর মাত্র কয়েক মাস পরে তার অবসর হবে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় আমার স্ত্রী চাকরি ছাড়তে প্রস্তুত।’
প্রসঙ্গত, গত ৩ আগস্ট উপজেলার সোনারঘোপ রমেশচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াছমিন বিদ্যালয়ের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলাব্যাপী উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার বিরোধিতা করলে ওই শিক্ষিকা সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে আমার বাবা মইনউদ্দীন মাস্টার মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। সেই যুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না। তাই আমার বিদ্যালয় থেকে এই ছবি সরাতে পারবো না।’ যদিও পরবর্তীতে তোপের মুখে সেই ছবি নামাতে বাধ্য হন তিনি।
মন্তব্য করুন