ডাকাত সর্দারসহ তিনজন গ্রেফতার, স্বীকারোক্তি
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় চাঞ্চল্যকর জোড়া হত্যাকান্ডে ও ডাকাতির নেপথ্যে কর্মচারীর হাত!

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার লক্ষীমন্ডপ গ্রামে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস ডাকাতিসহ শ্বশুর আফতাব উদ্দিন ও পুত্রবধূ রিভা হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। সেই সাথে ডাকাত সর্দারসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় তিন সদস্যকে গ্রেফতার এবং লুণ্ঠিত কিছু সোনার গহনা ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এই জোড়া হত্যাকান্ড ও ডাকাতির অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুল মান্নান হত্যার শিকার আফতাব উদ্দিনের পানি সেচপাম্প ঘরের কর্মচারী। নানা অপরাধে যুক্ত থাকার কারণে আফতাব উদ্দিন তাকে কাজ থেকে বাদ দিয়েছিলেন। এই ক্ষোভ থেকে অন্যান্য ডাকাতদের সাথে আফতাব উদ্দিনের বাড়িতে ডাকাতি ও জোড়া হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে মান্নান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান বলেন, আফতাব উদ্দিনের পুরোনো কর্মচারী আব্দুল মান্নানই এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। সে আগে আফতাবের সেচপাম্পে কাজ করতো। অসামাজিক কাজের কারণে তাকে বাদ দেওয়া হলে ক্ষোভ থেকে সে এই হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির ছক আঁটে।
ডিবি সূত্র জানায়, বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মুসার নির্দেশনায় বগুড়া ডিবি’র অফিসার ইনচার্জ ইকবাল বাহারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডিবি’র পুলিশ পরিদর্শক রাকিব হোসেনের নের্তত্বে ডিবি বগুড়ার একটি টিম অভিযানে নামে। অভিযানকালে গতকাল সোমবার গভীর রাতে ও আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ভোরে তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস ডাকাতিসহ জোড়া হত্যা মামলার আসামি ডাকাত সর্দারসহ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানকালে প্রথমে দুপচাঁচিয়া উপজেলার বেরুঞ্জ গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে ডাকাত সর্দার আব্দুল হাকিম (৩৪), একই উপজেলার লক্ষীমন্ডপ এলাকার মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে আব্দুল মান্নানকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়।
এসময় তাদের হেফাজত থেকে এক জোড়া সোনার কানের দুল, দুই জোড়া সিটি গোল্ডের চুড়ি, দু’টি সিটি গোল্ডের আংটি, সাড়ে ৭ হাজার টাকা, দু’টি মোবাইল ফোন ও একটি হাতঘড়ি উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ধৃত এই দুই আসামির দেওয়া তথ্যমতে, তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ভোরে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলাধীন চর জামাল গ্রামে অভিযান চালানো হয়।
আরও পড়ুনএসময় সেখান থেকে ডাকাত দলের অপর সদস্য আদমদিঘী উপজেলার বাশিকোড়া গ্রামের মৃত লছির আকন্দ ওরফে নছিরের ছেলে সদস্য রফিকুল ইসলামকে (৪১) গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মামলার তদন্তে প্রাপ্ত ধৃত আসামি ডাকাত সর্দার আব্দুল হাকিমের রিরুদ্ধে এর আগে ডাকাতি, চুরি এবং জুয়াসহ সাতটির বেশি এবং ধৃত আসামি ডাকাত সদস্য রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চুরি ও মাদকসহ দু’টির বেশি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
ধৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি আব্দুল মান্নান আফতাব উদ্দিনের সেচপাম্পে নিয়োজিত কর্মচারী হিসাবে কাজ করতো। কিন্তু আব্দুল মান্নান বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কারণে তাকে উক্ত কাজ থেকে বাদ দেন আফতাব উদ্দিন। এতে আফতাব উদ্দিনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে মান্নান।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি আব্দুল মান্নান ও তার সহোযোগী ডাকাত সর্দার আব্দুল হাকিমসহ অন্যান্য ডাকাতদের সাথে একত্রিত হয়। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাত সর্দার আব্দুল হাকিম অন্যান্য ডাকাতদের নিয়ে গত ৮ জুলাই দিবাগত রাত ২টার দিকে আফতার উদ্দিনের বাড়ির পিছনের প্রাচীরের সাথে থাকা পেয়ারা গাছ বেয়ে প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।
ডাকাতদল বাড়িতে ঢুকে আফতাব উদ্দিনকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে। কিন্তু তার ঘরে কিছু না পেয়ে তার পুত্রবধূ রিভার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে তারও হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং তার ঘরে থাকা টাকা ও সোনার গহনা লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ডিবি’র ওসি ইকবাল বাহার জানান, আসামিদের মধ্যে হাকিম এই জোড়া হত্যা ও ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) আদালতে বিচারকের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া অপর আসামি মান্নানকে তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। একইসাথে পলাতক অন্যান্য ডাকাতদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান আছে।
মন্তব্য করুন