বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৭ই এপ্রিল) দেড় দশক পর পাকিস্তানের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ। ফরেন অফিস কনসালটেশন বা পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই কথা হবে বলে আশাবাদী সরকার।
জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে সময়ই তাকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।
আওয়ামী লীগের পতনের পর গতি আসে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে। আগস্টেই প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার।২০১০ সালের পর এবার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব। বৃহস্পতিবারের (১৭ এপ্রিল) এই বৈঠকে ডিপ ফ্রিজে চলে যাওয়া সম্পর্কের অমীমাংসিত সব বিষয়ই আলোচনা করতে চায় ঢাকা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের সাথে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের ফরেন পলিসি হচ্ছে ‘প্রো বাংলাদেশ’। তাই বাংলাদেশের স্বার্থ যতটুকভাবে অক্ষুণ্ণ রাখা যায়, আমরা সেটাই করছি।বৈঠকের ফলাফল যাই হোক না কেন, সেটি যে আবার শুরু হচ্ছে, তাকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর পর দুই দেশের বৈঠক শুরু হচ্ছে — এই মুহূর্তে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ অনেক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সাথে বেগবান করা সম্ভব।
আরও পড়ুনসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা সফর করবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসহাক দার। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের সম্পদ, আটকে পড়া পাকিস্তানীদের ফেরানো ছাড়াও গণহত্যা স্বীকার করে দায়ীদের বিচারের মতো অনেক ইস্যু এখনো অমীমাংসিত। আছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার জনদাবিও। সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি এসব ইস্যুতেও কথা হবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর বলেন, পাকিস্তান যদি এই বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেয়, তাহলে দু’দেশের সম্পর্ক সহজ করতে একটি বাধা দূর হবে। সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান জানান, যেখানে ১৫ বছর ধরে কোন ধরনের আলাপ-আলোচনাই হয়নি, সেখানে বৈঠকের শুরুতেই এ সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা বেশি দূর আগাবে না। সুতরাং আমাদের অপেক্ষা করতে হবে বৈঠকের ঠিক কোন পর্যায়ে একটা ভালো মুহূর্ত আসে; যখন এ সমস্ত অমীমাংসিত বিষয়গুলো তুলে ফেলা যায়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের জায়গা বৃদ্ধি পেলে এবং যদি আরও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা যায়, সেক্ষেত্রে এই অমীমাংসিত বিষয়গুলো সুরাহা করা খুব একটা কঠিন কাজ হবে না। ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন আর চীনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি—এসব নিয়ে কূটনীতিতে চ্যালেঞ্জ বেড়েছে ঢাকা’র। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের নানা পদক্ষেপও চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে। এসব বিবেচনা করেই সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আশাবাদী বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন